ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২, ৩০ জুন ২০২৫, ০৪ মহররম ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চবিতে ৮ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি, ১০ দিনের কর্মসূচি দিলো শিবির

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৫৬, জুন ২৯, ২০২৫
চবিতে ৮ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি, ১০ দিনের কর্মসূচি দিলো শিবির ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ২০০৯ সালের পর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে ৫ শিবির নেতা এবং ৩ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়েছে শাখা ছাত্রশিবির 

রোববার (২৯ জুন) দুপুর আড়াইটায় চবির বুদ্ধিজীবী চত্বরে 'চবি সংস্কারে সাত দফা' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন চবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহাম্মাদ ইব্রাহীম, সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী, শিক্ষা সম্পাদক মোহাম্মদ পারভেজ, বায়তুলমাল সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক হাবিবুল্লাহ খালেদ, ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক রুহুল আমিন, এইচআরডি সম্পাদক রবিউল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ইসহাক ভূঁঞা, সাহিত্য সম্পাদক সাইদ বিন হাবিব, দাওয়াহ সম্পাদক হাবিব উল্যাহ, আইন বিষয়ক সম্পাদক আফনান হাসান ইমরান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক হারেস মাতব্বর-সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

এর আগে গত ১৯ মে ৭ দফা দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ছাত্রশিবির। ওই ৭ দফা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে একটি বুকলেট প্রকাশ করেছে সংগঠন।

ছাত্রশিবিরের সাত দফা:

শতভাগ আবাসন নিশ্চিত এবং আবাসন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অনাবাসিক সকল শিক্ষার্থীকে আবাসন ভাতা প্রদান করা। সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে সেশনজট নিরসন এবং শিক্ষার আধুনিকায়ন নিশ্চিত। পর্যাপ্ত ও নিরাপদ যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। অনতিবিলম্বে চাকসু নির্বাচন। দ্রুত সময়ের মধ্যে টিএসসি স্থাপন, সেন্ট্রাল অডিটোরিয়াম নির্মাণ, কেন্দ্রীয় মসজিদ পুনর্নির্মাণ এবং আবাসিক হল ও অন্যান্য স্থাপনাসমূহ সংস্কার করতে হবে। জুলাই বিপ্লব ও ফ্যাসিবাদী শাসনামলে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার এবং জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা। বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে অবৈধ নিয়োগের সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার এবং নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকুরিচ্যুত করা।

এসব দাবি আদায়ে আগামী ১ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রশিবির। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১-১০ জুলাই 'সংস্কার ক্যাম্পেইন', ১ জুলাই 'প্রতীকী সীট বণ্টন', ৩ জুলাই 'সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়', ৭ জুলাই 'গণস্বাক্ষর কর্মসূচি', ১০ জুলাই 'মানববন্ধন'।  

এদিকে ছাত্রশিবির প্রকাশিত বুকলেটে উঠে এসেছে ৮ শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের বিবরণ। এতে বলা হয়, ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের আলাওল হল শাখার পাঠাগার সম্পাদক মহিউদ্দিন মাসুম। যাকে নগরেন ষোলশহর রেলস্টেশনে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ২০১০ সালের ২৮ মার্চ চৌধুরী হাঁট রেলস্টেশনে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের ব্যবসা প্রশাসন শাখার প্রকাশনা সম্পাদক হারুন অর রশিদ কায়সারকে গলাকেটে হত্যার অভিযোগ রয়েছে  শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।  

২০১২ সালের ০৮ ফেব্রুয়ারি চবির প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের জীববিজ্ঞান অনুষদ শাখার প্রচার সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম এবং চবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের সোহরাওয়ার্দী হল শাখার সেক্রেটারি মাসউদ বিন হাবিবকে জিরো পয়েন্টে প্রথমে গুলি করে এবং পরে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।  

এছাড়াও ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের আমানত হল শাখার সেক্রেটারি মামুন হোসাইনকে আমানত হলে জবাই করে হত্যার অভিযোগ আছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।  

ছাত্রলীগের ৩ নেতাকে খুনের বিচার দাবি শিবিরের: 

২০১০ সালের ১৫ এপ্রিল চবি ছাত্রলীগ ও স্থানীয়দের মধ্যকার সংঘর্ষে অ্যাকাউন্টিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী আসাদুজ্জামান নিহত হন। স্থানীয় যুবলীগের নেতাকর্মীরা আসাদুজ্জামানকে হত্যা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী চত্বরে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল ও শাহ আমানত হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী তাপস সরকার। ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেইট সংলগ্ন নিজ বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ। ৯৫ কোটি টাকার দরপত্রের ভাগাভাগি নিয়ে চবি ছাত্রলীগের অন্যান্য পক্ষ তাকে হত্যা করেন বলে পরিবারের অভিযোগ রয়েছে।  

নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতের লক্ষ্যে এ তিন হত্যাকাণ্ডেরও বিচার চেয়েছে ছাত্রশিবির। পাশাপাশি ছাত্রশিবিরের ৫ নেতাকে হত্যার ঘটনায় বিচার নিশ্চিত করতে আইনী প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান চবি শিবির সভাপতি মুহাম্মদ ইব্রাহীম।  

এছাড়াও জুলাই গণঅভ্যুত্থান-সহ বিগত ১৬ বছরে ছাত্রলীগের হামলায় অসংখ্য শিক্ষার্থী পঙ্গু ও আহত হয়েছেন- দাবি ছাত্রশিবিরের। এসব ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে ছাত্রশিবির।

এমএ/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।