ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব এবং তা দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। এক্ষেত্রে ভারতকে জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী কাশ্মীরের জনগণের নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার স্বীকার করতে হবে।
এসব কথা বলেছেন পাকিস্তানের সাবেক সিনেটর, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা সচিব এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) গুরুত্বপূর্ণ নেতা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল কাইয়ুম। বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাত ও যুদ্ধবিরতির আলোকে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে নিজের মতামত দেন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতার জন্য সংলাপের প্রয়োজনীয়তা ওপর জোর দেন।
বাংলানিউজ: সাম্প্রতিক সংঘাত এবং যুদ্ধবিরতির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান ও ভারতের বর্তমান সম্পর্ক কেমন বলে আপনি মনে করেন? উত্তেজনা কমানোর জন্য কোনো কূটনৈতিক সমাধান দেখা যাচ্ছে?
আবদুল কাইয়ুম: দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমানে পাকিস্তান-ভারতের সম্পর্ক সবচেয়ে বাজে পর্যায়ে রয়েছে। এর কারণ পাকিস্তান নয়, বরং ভারতের অহংকারী ও উদাসীন মনোভাব, তাদের আধিপত্যবাদী পরিকল্পনা, বর্ণবাদের প্রবণতা এবং তাদের সামরিক ক্ষমতা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা।
আরএসএস-নিয়ন্ত্রিত হিন্দু নেতারা পাকিস্তানবিরোধী বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয় এবং বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। ভারতীয়দের চরমপন্থার কারণে সেদেশে সব সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলিম, শিখ ও খ্রিস্টানদের জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে।
কাশ্মীরে নির্যাতন, খালিস্তানের স্বাধীনতা দাবি করা শিখ নেতাদের ওপর হামলা, দলিত ও তামিলদের অবমাননা, মণিপুরে খ্রিস্টান চার্চ ধ্বংস এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে একঘরে করে দিয়েছে।
সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে যে সংঘাত হয়েছে, সেটি ভারতের একটি ভুয়া অভিযানের কারণের শুরু হয়। এই সংঘাত দক্ষিণ এশিয়া ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারত। ভারত (পহেলগাওঁ হামলার) কোনো তদন্ত ছাড়াই উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
তারা তাদের প্রতিপক্ষকে অবমূল্যায়ন করেছিল। সেই কারণে কৌশলগতভাবে তাদের পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে, যা এই অঞ্চলের সমীকরণ বদলে দিয়েছে। তাদের সংবাদমাধ্যমের মিথ্যা প্রচারণা শুধু সেনাবাহিনীকে ভুল পথে পরিচালিত করেনি, বরং সাধারণ জনগণ এবং সরল দৃষ্টির রাজনৈতিক নেতাদেরও বিভ্রান্ত করেছিল।
পাকিস্তান একটি শান্তিপ্রিয় দেশ এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দর্শনে বিশ্বাসী। ভারত যদি জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী কাশ্মীরি জনগণের নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার স্বীকার করে, সিন্ধু পানি চুক্তির প্রতি সম্মান দেখায় এবং পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন বন্ধ করে, তবে ভারতের সঙ্গে শান্তি সম্ভব এবং তা দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। কিন্তু বিজেপির হিন্দুত্ববাদী দর্শন ও আরএসএস-নিয়ন্ত্রিত উগ্রবাদী সরকারের কারণে শান্তি এখনো দূরের বিষয় বলে মনে হচ্ছে।
বাংলানিউজ: পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিশেষ করে কাশ্মীর সীমান্তে নিয়মিত উত্তেজনা থাকে। উত্তেজনা কমাতে দুই দেশের কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
আবদুল কাইয়ুম: ভারতকে কাশ্মীরি জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে— সেখানে মোতায়েন সাত লাখ সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে। দমন-পীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে। সংবিধান থেকে ৩৭০ ও ৩৫-এ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্তও প্রত্যাহার করতে হবে। নিয়ন্ত্রণ রেখার উভয় পাশে অবস্থান করা জাতিসংঘের সামরিক পর্যবেক্ষকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার পাশাপাশি সব অভিযোগ তদন্তের সুযোগ দিতে হবে ভারতকে।
বাংলানিউজ: পাকিস্তান কি ভারতের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তিতে জাতিসংঘ বা মিত্র রাষ্ট্রগুলোর মতো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় যাওয়ার কথা বিবেচনা করছে? যদি করে থাকে, তবে কেমন সাড়া মিলেছে?
আবদুল কাইয়ুম: কাশ্মীর ও সিন্ধু পানি চুক্তিসহ সব ধরনের দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিষয়ে গঠনমূলক দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় পাকিস্তান সবসময় প্রস্তুত।
বাংলানিউজ: চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান ও ভারতের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক কতটা প্রভাবিত হচ্ছে? রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও কি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার কোনো সম্ভাবনা আছে?
আবদুল কাইয়ুম: বর্তমানে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সরাসরি বাণিজ্য প্রায় বন্ধ। এমনকি পরোক্ষ বাণিজ্যিক সম্পর্কও ভারতীয় সরকারের একতরফা আগ্রাসনের কারণে থমকে গেছে। এর ফলে উপমহাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আমরা চাই, দক্ষিণ এশিয়ায় মুক্ত ও ন্যায়সঙ্গত বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে উঠুক এবং সার্ক ফোরামকে কার্যকর ও গতিশীল করা হোক। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারতের অহংকারপূর্ণ মনোভাব ও যুদ্ধবাদী নীতি সেই সম্ভাবনাকে বহু দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদে ভারতের মদদ, অর্থায়ন ও উসকানি বন্ধ করাও অত্যন্ত জরুরি।
বাংলানিউজ: চীন পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের সহযোগী। চীনের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলছে?
আবদুল কাইয়ুম: চীন একটি শান্তিপ্রিয় দেশ, যারা কিনা সহাবস্থানের নীতিতে বিশ্বাস করে এবং বিশ্বব্যাপী— যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ভারত পর্যন্ত—প্রায় সব দেশের সঙ্গেই বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তবে ২০১৯ সালে ভারতের নরেন্দ্র মোদীর সরকার সংবিধান সংশোধন করে লাদাখ অঞ্চলের অবস্থান পরিবর্তন করলে চীন তা ভালোভাবে নেয়নি এবং এতে উত্তেজনা তৈরি হয়।
চীন ও পাকিস্তানের সম্পর্ক দৃঢ়— এটি কেবল কৌশলগত বা অর্থনৈতিক স্বার্থের ভিত্তিতে নয়, আন্তরিকতা ও পারস্পরিক সম্মানের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমাদের এই অংশীদারত্ব কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয়, বরং আঞ্চলিক উন্নয়ন ও শান্তির জন্য। ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ একটি যুগান্তকারী অর্থনৈতিক উদ্যোগ, যা চীন-পাকিস্তানকে ‘সিপেক’-এর মাধ্যমে সংযুক্ত করেছে। পাশাপাশি এটি এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের অনেক দেশকে পাঁচটি বাণিজ্য করিডোরের মাধ্যমে যুক্ত করেছে।
বাংলানিউজ: যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সম্পর্ক গত কয়েক বছরে কীভাবে বদলেছে? ভবিষ্যতে প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্পর্কে আপনি কী ভাবছেন?
আবদুল কাইয়ুম: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের দৃঢ় কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৫০-এর দশকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট আইজেনহাওয়ার পাকিস্তানকে উল্লেখযোগ্য সামরিক সহায়তা দিয়েছিলেন। পরে পাকিস্তান উন্নত প্রযুক্তির কামান, পি-৩সি ওরিয়ন টহল বিমান ও এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পায়, যা দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক জোট ন্যাটোর বাইরের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র এবং সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ফ্রন্টলাইন রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করেছে। আমাদের সর্বোচ্চ রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রেই যায়, যেটি শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রমাণ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও পাকিস্তানি নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেক সুফল পেয়ে থাকে।
তবে যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কেন্দ্র পশ্চিম থেকে পূর্বে সরে যেতে শুরু করে এবং চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে ওঠে, তখন যুক্তরাষ্ট্র তার একক প্রভাব বজায় রাখতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা বাড়তে থাকে এবং ভারত স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রক্সি হিসেবে চীনকে ঠেকাতে কৌশলগত অংশীদার হয়ে ওঠে।
পাকিস্তানের দৃষ্টিতে, ভারত চীনের সমতুল্য নয়—চীনের অর্থনীতি ভারতের চেয়ে পাঁচগুণ বড় এবং চীন আধুনিক হাইপারসনিক সামরিক প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে। পাকিস্তান কৃতজ্ঞ যে চলমান সংকটে যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে। এই সংকটে পাকিস্তান সরাসরি মঞ্চে না থাকলেও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ভারত ও ইসরায়েলের দমনমূলক জোটের বিপরীতে, পাকিস্তান ও চীন একটি প্রতিরোধমূলক জোট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পাকিস্তানের প্রচলিত প্রতিরোধ ক্ষমতা বৈধতা পেয়েছে এবং ভারতের তথাকথিত ‘দ্রুত শাস্তিমূলক হামলার’ নীতির ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তান কৌশলগতভাবে ভারতের সমপর্যায়ের, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে এগিয়েও রয়েছে। ভারত আন্তর্জাতিক আইন ও যুদ্ধনীতি লঙ্ঘন করে নিজের দুর্বলতাই উন্মোচন করেছে।
বাংলানিউজ: ভারতের পক্ষ থেকে কি নতুন কোনো হামলার আশঙ্কা আছে? পাকিস্তানের কাছে কোনো গোয়েন্দা তথ্য আছে?
আবদুল কাইয়ুম: ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী আরএসএস নেতাদের ভুল সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যুক্তিবোধসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়কেরা কখনো যুদ্ধের কথা বলেন না। জাতিসংঘ সনদেও বলা হয়েছে, কোনো রাষ্ট্র যদি যুদ্ধের হুমকি দেয় বা বিশ্ব শান্তি নষ্ট করে, তবে সেই দেশকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং প্রয়োজনে জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনায় সামরিক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
ভারতের উচিত, আলোচনার টেবিলে বসে সব সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা করা। যুদ্ধের মাধ্যমে কেবল উভয়পক্ষের ধ্বংসই নিশ্চিত হবে। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রী মোদী সেই হিটলারের পথ অনুসরণ করবেন না—যার নীতির কারণে হিরোশিমা ও নাগাসাকির মতো শহর ধ্বংস হয়েছিল।
ভারত একটি বড় দেশ, কিন্তু বিজেপি সরকারের বর্তমান নীতিগুলো শুধু আঞ্চলিক শান্তির জন্যই নয়, বরং ভারতের জন্যও অত্যন্ত বিপজ্জনক। বিজেপি সরকার যদি আসাম, কাশ্মীর, খালিস্তান, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরা, অরুণাচল প্রদেশ ও মণিপুরের মতো অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ আন্দোলনে বলপ্রয়োগ এবং দমননীতির পথ বন্ধ না করে, তবে ভারতের অখণ্ডতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা ও ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশবন্ত সিং কেবল পাকিস্তানের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর প্রশংসা করার কারণে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। তিনি সতর্ক করে বলেছিলেন— এই নীতি চালিয়ে গেলে ‘ভারতে তৃতীয়বার বিভাজনের’ আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।
বাংলানিউজ: পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সংঘাত নিয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রচারিত হচ্ছে। পাকিস্তানের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আপনার কাছে কোনো তথ্য আছে?
আবদুল কাইয়ুম: যুদ্ধ সবসময় ধ্বংসাত্মক। চীনা সেনাপ্রধান সুনত্জু তার বই ‘আর্ট অব ওয়্যার’-এ বলেছেন, সবচেয়ে ভালো কৌশল হলো যুদ্ধ না করেই জিতে যাওয়া। ভারতের অত্যাধুনিক রাফাল বিমান, কোটি কোটি ডলারের এস- ৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র এবং তাদের সন্ত্রাসী শিবির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো বিশ্বব্যাপী সবাই জানে। যুদ্ধক্ষেত্র কখনো মিথ্যা কথা বলে না। পাকিস্তানেরও কিছু ক্ষতি হয়েছে। ৪০ জন বেসামরিকের প্রাণ গেছে। ১৩ সেনার প্রাণ গেছে। সামান্য কিছু সামরিক সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে।
বাংলানিউজ: সমঝোতা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে— পাকিস্তানের অবস্থান কী?
আবদুল কাইয়ুম: পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি মানতে চায়। সেনাবাহিনীকে বলা হয়েছে, তারা যেন উসকানিতে প্ররোচিত না হয়।
বাংলানিউজ: ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের সাম্প্রতিক অবনতি কাটিয়ে ওঠার কোনো পরিকল্পনা পাকিস্তানের আছে?
আবদুল কাইয়ুম: পাকিস্তান সব সময় প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়। আমরা কাশ্মীরে নিরপরাধ পর্যটকদের হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি এবং নিরপেক্ষ যৌথ তদন্তের জন্য এখনো প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু ভারত আমাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতের বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদদের উচিত সরকারকে পরামর্শ দেওয়া, যেন তারা কোনো দেশের হাতিয়ার না হয় এবং ইসরায়েলের পথ অনুসরণ না করে। পাকিস্তান কিন্তু গাজা উপত্যকা বা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র নয়। এটি জনসংখ্যায় বিশ্বে পঞ্চম, সপ্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। আমাদের উচিত যুদ্ধ নয়, শান্তি প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দেওয়া।
বাংলানিউজ: সাম্প্রতিক সংঘাতে পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতা বাংলাদেশে আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসলামাবাদ কি ঢাকার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করতে চায়?
আবদুল কাইয়ুম: বাংলাদেশ আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ। পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি, পিএএফ একাডেমি, পাকিস্তান নৌবাহিনী একাডেমি এবং স্টাফ কলেজে প্রশিক্ষিত অফিসাররা তাদের পেশাদারত্ব, সাহস ও যুদ্ধ দক্ষতায় অপরাজেয়। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য পূর্ণ সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পাকিস্তান প্রস্তুত। আমাদের একাডেমি এবং প্রশিক্ষণকেন্দ্র আমাদের ভাইদের জন্য উন্মুক্ত। পাকিস্তানও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, শিল্প উন্নয়ন, ব্যবসা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। আমাদের বাঙালি ভাইদের পাকিস্তান গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পাকিস্তান আন্দোলন শুরু হয়েছিল ঢাকা থেকেই। নিজেদের দেশকে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ বলা তাদের সার্বভৌম অধিকার। দুই দেশ ইচ্ছা করলে কনফেডারেশন গঠনের মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করে তাদের জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে পারে।
এসএমএস/আরএইচ