বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ হকি দলের জন্য নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে ডাচ কোচ সিগফ্রাইড আইকম্যানের হাত ধরে। অভিজ্ঞ এই কোচকে আজ (রোববার) আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন।
আইকম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশে আসার আগেই এখানকার হকির অবস্থা সম্পর্কে জানতাম। আমি বহুবার বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছি, বিশ্লেষণ করেছি। তাই আমি জানি এই দলের সামর্থ্য কোথায়, দুর্বলতা কোথায়। ’
বাংলাদেশ দল পড়েছে জুনিয়র বিশ্বকাপে কঠিন এক গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে। আইকম্যান স্বীকার করেছেন, ‘আমরা কি জিতব? না। আমরা কি সেমিফাইনাল খেলব? হয়তো না। কিন্তু আমরা এমন হকি খেলতে চাই যাতে প্রতিপক্ষ আমাদের হারাতে কষ্ট পায়। এটিই আমাদের মূল লক্ষ্য। ’
ডাচ কোচ পরিষ্কার জানিয়ে দেন, আধুনিক হকিতে শুধু আবেগ দিয়ে কিছু হয় না। ‘আমরা এখন ডেটার সঙ্গে কাজ করি। প্রতি বছরই নতুন জিনিস শেখার প্রয়োজন হয়। খেলোয়াড়দের শুধু বড় শরীর নয়, শক্তির ভেতরের দিকটা গড়তে হবে। ফিটনেস, শৃঙ্খলা আর সঠিক মানসিকতা ছাড়া সফল হওয়া যাবে না। ’
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা স্ট্যামিনার অভাব এবং প্রতিপক্ষের চাপে শেষ দিকে ভেঙে পড়া। ‘বাংলাদেশ সাধারণত আক্রমণভাগে খুব আগ্রাসী, কিন্তু রক্ষণ ভুলে যায়। ফলে শেষ কোয়ার্টারে গোল খেয়ে বসে এবং হতাশ হয়ে পড়ে। ’
পরিবর্তনের জন্য মানসিকতা বদলানো জরুরি বলে মন করেন আইকম্যান। তিনি বলেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে পারফর্ম করার ইচ্ছা আছে, কিন্তু তারা বুঝে না কীভাবে সেটা করতে হয়। তাই আমাদের কাজ হলো তাদের ধাপে ধাপে প্রস্তুত করা। মৌলিক বিষয় শেখানো, খেলাটা উপভোগ করতে শেখানো, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে শেখানো এবং শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য খেলা শেখানো। ’
তাঁর মতে, মানসিক পরিবর্তন সবচেয়ে জরুরি। ‘যদি আপনি প্রতিপক্ষকে বড় ভাবেন, তাহলে কখনোই তাকে হারাতে পারবেন না। কঠোর পরিশ্রম, ফিটনেস এবং আত্মবিশ্বাস এই তিনটিই পারে পার্থক্য গড়ে দিতে। ’
অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন, কেন তিনি বাংলাদেশের মতো একটি দেশের সঙ্গে কাজ করতে এলেন? জবাবে আইকম্যান বলেন, ‘কারণ এখানে প্রতিভাবান এক তরুণ দল আছে এবং একটা ফেডারেশন আছে, যারা সেই দলের ওপর বিনিয়োগ করতে চায়। ভারত বা জাপানের মতো ধনী কাঠামো নেই, কিন্তু এখানে সম্ভাবনা আছে—এটাই বড় চ্যালেঞ্জ। ’
তবে সময় স্বল্পতা তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় বাধা। ‘আমাদের হাতে মাত্র চার মাস আছে। এটা খুবই কম সময়। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, ভালো পরিকল্পনা আর মনোযোগী কাজের মাধ্যমে আমরা একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দল গড়ে তুলতে পারি। ’
‘আমি এমন একটা দল দেখতে চাই, যারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে। যারা হারলেও প্রতিপক্ষের জন্য কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে। ’ যোগ করন তিনি।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ জিতবে কি না, সেটি নিশ্চিত করে বলা না গেলেও, ডাচ কোচের ছোঁয়ায় যদি দল লড়াকু মানসিকতা ও পেশাদার কাঠামো গড়ে তুলতে পারে, তবে ভবিষ্যতের হকির ভিত্তি যে মজবুত হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
এআর