ঢাকা, রবিবার, ৩ কার্তিক ১৪৩২, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

সমন্বিত জাতীয় গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে: কাদের গনি চৌধুরী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:২৯, অক্টোবর ১৮, ২০২৫
সমন্বিত জাতীয় গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে: কাদের গনি চৌধুরী বক্তব্য দিচ্ছেন বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী

যশোর: বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, দেশে সাংবাদিকতা নিয়ে ৫০টি নীতিমালা রয়েছে। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

এগুলো সবই সাংবাদিক এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। একটা থেকে রেহাই পাওয়ার পর আরেকটা ঝোলানো হয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য ‘সমন্বিত জাতীয় গণমাধ্যম নীতিমালা’ প্রণয়ন করতে হবে। এটি প্রণয়ন হলে এক একটি গণমাধ্যমের জন্য এক একটি আইন বা নীতিমালার দরকার পড়বে না।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) যশোরের পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের (জেইউজে) দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। দুপুর ১২টায় প্রেসক্লাব যশোরের শহীদ সাংবাদিক গোলাম মাজেদ মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।  

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকরাই পারেন এদেশের সাংবাদিকতা বাঁচাতে। এজন্য প্রয়োজন সাংবাদিকদের সুদৃঢ় ঐক্য। প্রয়োজন দাসত্ব ছেড়ে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়া। তাহলে সাংবাদিকরা ‘পেইডডগ’ না হয়ে সত্যিকারভাবেই ‘ওয়াচডগ’ হিসেবে জাতির বিবেকে পরিণত হতে পারবেন।

তিনি বলেন, সংবাদপত্র ছাড়া মানব সভ্যতা নির্মাণ করা সম্ভব না। সাংবাদিকরা হলেন জাতির বিবেক। সাংবাদিকতা পেশা হলো পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সম্মানজনক পেশা। কিন্তু, আমরা কতটুকু তা ধরে রাখতে পেরেছি সেই প্রশ্ন উঠছে।  

প্রশ্নটির প্রসঙ্গে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের কাজ সমাজের প্রকৃত চিত্র যথাযথভাবে জাতির সামনে তুলে ধরা। কিন্তু, এ জায়গাতেও আমরা সঠিকভাবে থাকতে পারিনি। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে এদেশের অনেক গণমাধ্যম ও সাংবাদিক ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে তারা ফ্যাসিস্টকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সহায়তা করেছে। যখন ফ্যাসিবাদের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞে পিচঢালা রাজপথ লাল হয়ে গেছে তখন গণমাধ্যম কর্মীদের একটি অংশ ফ্যাসিবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে। তাদের জন্য একরাশ ঘৃণা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ১৬ বছর দেশে কোন সাংবাদিকতা ছিল না। তারা দায়বদ্ধ থেকেছে ফ্যাসিস্ট ও ক্ষমতাবানদের প্রতি। এখন নতুন করে সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে মালিকপক্ষ। তাদের নির্দেশ ছাড়া সাংবাদিক কোনো সংবাদ লিখতে পারেন না। অথচ, সাংবাদিকদের কোনো বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে না। চার-পাঁচ হাজার টাকায় এক একজন সাংবাদিক নিয়োগ দিচ্ছেন অধিকাংশ মালিক। এর বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। অধিকার আদায়ে সব সাংবাদিককে আজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলেও উচ্চারণ করেন দেশের এই শীর্ষ সাংবাদিক নেতা।

বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি বলেন, ফ্যাসিস্টের পতনের পর অনেক দালাল সাংবাদিক দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। অনেকে পালানোর সময় আটক হয়েছেন। অনেককে নানা অপরাধের কারণেও আটক করা হয়েছে। এরা ফ্যাসিবাদের আমলে গণশত্রুদের মুখোশ উন্মোচন না করে উল্টো তাদের দালালি করেছেন। তার খেসারত এখন তারা দিচ্ছেন। অথচ, সেদিন সাংবাদিকরা যদি সত্যিকারভাবেই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারতেন তাহলে এতগুলো মায়ের বুক খালি হতো না। এর দায় এদেশের সাংবাদিকরা কখনোই এড়াতে পারেন না।  

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, গণমাধ্যম নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখতে না পারলে গণশক্তিতে পরিণত হবে। এটা সুস্থ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে অন্তরায়। যারা আগামীতে ক্ষমতায় যাবেন তারা যেন গণমাধমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করেন সে ব্যাপারেও তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।  

কাদের গণি চৌধুরী সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের রোববারের (১৯ অক্টোবর) নির্বাচনে যারা বিজয় অর্জন করবেন তাদের প্রতি অগ্রিম শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।

তিনি আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, নতুন নেতৃত্ব যশোরের পেশাদার সাংবাদিকদের দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ থেকে সোচ্চার ভূমিকা পালন করবেন। তিনি সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভারও শুভ কামনা করেন।  

সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শিক্ষাবিদ অধ্যাপক নার্গিস বেগম।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন এবং সহকারী মহাসচিব এহতেশামুল হক শাওন।
সম্মনিত অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর যশোর জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন এবং দৈনিক লোকসমাজের প্রকাশক শান্তুনু ইসলাম সুমিত।

সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর যশোর জেলা প্রচার সেক্রেটারি অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন আহমেদ, প্রেসক্লাব যশোরের সেক্রেটারি এসএম তৌহিদুর রহমান, খুলনা মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আনিসুজ্জামান, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সাবেক সভাপতি নূর ইসলাম, সাবেক সেক্রেটারি আহসান কবির এবং যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান।

সভা সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ জামান।

সভার শুরুতে অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন ইউনিয়নের প্রাক্তন নেতারা।

পরে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন ইউনিয়নের সদস্য এস এম সোহেল। আলোচনা পর্ব শুরুর পূর্বে জুলাই শহীদ এবং সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের প্রয়াত সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এসএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।