ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে কুবি ছাত্রী ও তার মাকে ‘হত্যা’ করেন কবিরাজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৪৮, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫
ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে কুবি ছাত্রী ও তার মাকে ‘হত্যা’ করেন কবিরাজ মোবারক হোসেন

কুমিল্লা: কুমিল্লা নগরের কালিয়াজুরি এলাকা থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ছাত্রী ও তার মায়ের মৃত্যুর রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে।  

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) ভোরে নগরের কালিয়াজুরি খেলার মাঠের পাশের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় একই দিন আব্দুর রব কবিরাজ নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে র‌্যাব। তার বাড়ি নাঙ্গলকোট উপজেলায়। এছাড়া একই দিন রাতে মোবারক হোসেন কবিরাজ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।  

মোবারক কবিরাজই সরাসরি ওই দুজনকে হত্যা করেছেন বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান।  

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মো. মোবারক হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কথিত ছিল, তাহমিনা বেগম ফাতেমার মেয়ে সুমাইয়া আফরিন রিন্তির ওপর জিনের প্রভাব ছিল। এজন্য ফাতেমা তার মেয়েকে বাবুস সালাম জমিরিয়া মাদরাসার ইলিয়াস হুজুরের কাছে ঝাড়ফুঁক করার জন্য যেতেন। সেখানে মো. মোবারক হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হলে ফাতেমা তাকে বাসায় এসে মেয়েকে ঝাড়ফুঁক দিতে বলেন। মোবারক হোসেন কয়েকবার তাদের বাসায় গিয়ে সুমাইয়া আফরিন রিন্তিকে ঝাড়ফুঁক করেছেন। গত এক মাস ধরে মোবারক তাদের বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে আটটায় মোবারক হোসেন একটি কমলা রঙের শপিং ব্যাগ ও একটি কালো রঙের ব্যাগ নিয়ে তাদের বাসায় যান। সুমাইয়াকে ঝাড়ফুঁক করে বাসায় পানি ছিটান। বেলা ১১টা ২৩ মিনিটে বের হয়ে যান তিনি। আবার বেলা ১১টা ৩৪ মিনিটে বাসায় ফিরে দেখেন ফাতেমা তার রুমে শুয়ে আছেন। এসময় মোবারক হোসেন সরাসরি সুমাইয়ার কক্ষে গিয়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে ফাতেমা দেখে ফেলেন এবং তিনি মোবারককে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় মোবারক হোসেন ও ফাতেমার মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। মোবারক হোসেন একপর্যায়ে ফাতেমাকে তার রুমে নিয়ে গিয়ে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এরপর সুমাইয়ার ঘরে গিয়ে আবার তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এসময় সুমাইয়া বাধা দিলে তাকে গলা চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন মোবারক। এরপর বাড়িতে থাকা চারটি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে পালিয়ে যান তিনি।

পুলিশ সুপার জানান, মোবারক হোসেন ট্রেনে করে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তবে এর আগেই তাকে শহরতলির দুর্গাপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মোবারকের বাড়ি দেবিদ্বার উপজেলায়। তিনি কুমিল্লা নগরের বাগিচাগাঁওয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

বাড়ির মালিক আনিসুল ইসলাম রানা জানান, সাড়ে তিন থেকে চার বছর আগে কুমিল্লার আদালতের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বাড়িটি ভাড়া নেন। গত বছর তার মৃত্যুর পর স্ত্রী তাহমিনা আক্তার (৫২), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন রিন্তি (২৪) ও তার দুই ছেলে বাড়িটিতে থাকতেন। সুমাইয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তারা অন্য কারও সঙ্গে তেমন কথা বলতেন না। গত রোববার রাতে তার এক ছেলে ঢাকা থেকে বাসায় আসেন, অন্য ছেলে কুমিল্লা ইপিজেডে চাকরি করেন। তারা ঘরের দরজা খোলা দেখে ভাবেন, তাদের মা ও বোন ঘুমিয়ে আছেন। কিন্তু বাসায় ঢোকার পর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও তাদের সাড়া শব্দ না পেয়ে রুমে গিয়ে দেখেন, তারা নড়ছেন না। পরে ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে।

র‌্যাপিড অ্যঅকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-১১ সিপিসি-২ এর কোম্পানি অধিনায়ক মেজর সাদমান ইবনে আলম বলেন, সন্দেহভাজন একজনকে নাঙ্গলকোট থেকে সোমবার দুপুরে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কোতোয়ালি মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, মৃত্যুর দুদিন আগে মা-মেয়ে কবিরাজ আব্দুর রবের কাছে পরামর্শের জন্য নাঙ্গলকোট গিয়েছিলেন। সর্বশেষ ওই কবিরাজের সঙ্গেই নিহত ফাতেমার যোগাযোগ হয়।

এদিকে সুমাইয়া ও তার মা ফাতেমাকে হত্যার ঘটনায় দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সোমবার ও মঙ্গলবার  মানববন্ধন করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।