রাজবাড়ী: রাজবাড়ীতে নুরাল পাগলার দরবারে হামলার সময় ভক্ত রাসেল মোল্লা (২৮) নিহত হওয়ার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা চার হাজার জনকে আসামি করে মামলা করেছেন তার বাবা।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় করা মামলায় হত্যা ছাড়াও অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো, ক্ষতিসাধন, চুরি ও জখমের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ মামলায় লতিফ ইমাম ও আসলাম শেখ নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত রাসেল মোল্লা গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের পূর্ব তেনাপচা ঝুটুমিস্ত্রি পাড়ার আজাদ মোল্লার ছেলে। তিনি মোস্তফা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের কাভার্ডভ্যানচালক ছিলেন।
জানা গেছে, শুক্রবার (৫ আগস্ট) জুমার নামাজের পর ঈমান-আকিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিতর্কিত নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর চালানো হয়। এসময় নুরাল পাগলার ভক্তদের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হন। এসময় নিহত হন নুরাল পাগলার ভক্ত রাসেল মোল্লা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে হামলা চালানো হয় পুলিশের ওপর, ভাঙচুর করা হয় পুলিশের দুটি গাড়ি। এতে ১০ থেকে ১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় শুক্রবার রাতেই অজ্ঞাতনামা তিন হাজার ৫০০ জনকে আসামি করে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মামলা করেন এ থানার উপ-পরিদর্শক সেলিম মোল্লা। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরীফ আল রাজীব বলেন, দুটি মামলায় যারা প্রকৃত অপরাধী, তাদেরই চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
এর আগে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে নুরাল পাগলার দরবার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় নিরপরাধ কাউকে হয়রানি কিংবা গণগ্রেপ্তার করা হবে না। একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হাজার হাজার লোক অংশ নিতে পারে। কিন্তু যখন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অশান্ত হয়ে যায়, তখন সবার সম্পৃক্ততা থাকে না। তাই সবাইকে আসামি করা বা গ্রেপ্তার করা আইনসঙ্গত নয়। যারা অশান্তির কারণ, যারা আইনশৃঙ্খলা ভেঙেছে কেবল তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে। অপরাধীদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলা বহু বছর আগে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন দরবার শরিফ। আশির দশকের শেষের দিকে নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করে আলোচনায় আসেন তিনি। ওই সময়ে তার বিরুদ্ধে তীব্র জনরোষ তৈরি হয়। পরে ১৯৯৩ সালের ২৩ মার্চ জনরোষ এড়াতে তিনি মুচলেকা (অঙ্গীকার নামা) দিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। এর কিছুদিন পর তিনি আবার ফিরে এসে তার দরবার শরিফের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন।
গত ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুরাল পাগলা। পরে ওই দিনই রাতে তার ভক্তানুরাগীদের অংশগ্রহণে দরবার শরিফের ভেতরে তাকে মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু স্থানে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয়।
কিন্তু তার কবর পবিত্র কাবা শরিফের আদলে করা হয়, কবরের রং করা হয় কালো। যা দেখতে পবিত্র কাবা শরিফের মতো। এতেই বাধে বিপত্তি। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ফুঁসে ওঠেন তৌহিদি জনতা। তৌহিদি জনতার আন্দোলনের ফলে কবরের রং পরিবর্তন করা হয়। এ নিয়ে অসন্তোষ থেকে বিষয়টি নাশকতা পর্যন্ত গড়ায়।
এসআই