ঢাকা, রবিবার, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

সুন্দরবনে জেলের মৃত্যু, খোঁজ রাখে না বন বিভাগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:০৮, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫
সুন্দরবনে জেলের মৃত্যু, খোঁজ রাখে না বন বিভাগ

সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণে গিয়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হরিপদ মন্ডল (৬০) নামে এক জেলের মৃত্যু হয়। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১টার দিকে সুন্দরবনের মালঞ্চ নদীর জোড়া বয়ারসিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

তবে বিষয়টি জানাজানি হয় গতকাল শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায়। উদ্বেগের বিষয় হলো, বন বিভাগ এ মৃত্যুর খবরও জানে না।

মৃত হরিপদ মন্ডল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগরের সিংহড়তলী গ্রামের মৃত অনন্ত মন্ডলের ছেলে। প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে তিনি সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে বন বিভাগের কদমতলা স্টেশন থেকে পারমিট নিয়ে হরিপদ মন্ডল ও সুকুমার মন্ডল ছোট নৌকায় কাঁকড়া ধরতে মালঞ্চ নদীর জোড়া বয়ারসিং এলাকায় যান। শুক্রবার দুপুরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন হরিপদ। সঙ্গে থাকা জেলেরা এগিয়ে এলেও ততক্ষণে তার মৃত্যু হয়। পরে লাশ গাবুরায় আনা হয় এবং সেখান থেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শনিবার সন্ধ্যায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

হরিপদের সঙ্গী সুকুমার মন্ডল বলেন, কাঁকড়া ধরার একপর্যায়ে হঠাৎ হরিপদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি আশপাশের জেলেদের ডাকলে তারা নৌকা নিয়ে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে তিনি মারা যান।

তার প্রতিবেশী অবিনাশ চক্রবর্তী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার আমাদের মতো গরিব জেলেদের কথা ভাবে না। বনে গেলে বাঘের ভয়, জলদস্যুর ভয়। এর ওপর আবার সরকারি অফিসগুলোর এমন উদাসীনতা— তাহলে আমাদের কী হবে?

বন বিভাগের কদমতলা স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা সোলাইমান হোসেন বলেন, তিনি ঘটনাটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না।

সুন্দরবনে জেলেদের নিরাপত্তা ও বন বিভাগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বনজীবীরা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা শুধু কাগজ আর টাকার বিনিময়ে পারমিট পাই। কিন্তু আমাদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। সুন্দরবনে অসুস্থ হলে কোনো জেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। সরকার ঠিকই বনজীবীদের কাছ থেকে রাজস্ব নিচ্ছে, কিন্তু তাদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারছে না।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশকর্মী ও সুন্দরবন নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা সাংবাদিক পীযূষ বাউলিয়া পিন্টু, পরিবেশকর্মী হাফিজুর রহমান হাফিজ ও আনিসুর রহমান। তারা বলেন, বন বিভাগের এই ধরনের উদাসীনতা শুধু বনজীবীদের নিরাপত্তার জন্য নয়, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রেও একটি বড় বাধা। যদি বন বিভাগ বনের ভেতরে কী ঘটছে তা-ই না জানে, তাহলে অবৈধ কার্যকলাপ ও চোরা শিকার ঠেকানোও কঠিন হবে।

তারা জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বন বিভাগের কার্যকর নজরদারি ও জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।