সাতক্ষীরা: সংসদীয় আসনের চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশের পর সাতক্ষীরার চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতে দেখা দিয়েছে ভোটের নতুন সমীকরণ।
চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী, কেবল অপরিবর্তিত রয়েছে সাতক্ষীরা-১ আসনের (তালা-কলারোয়া) সীমানা।
সূত্র মতে, স্বাধীনতার পর থেকে সাতক্ষীরায় ৫টি সংসদীয় আসন ছিল। ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাতক্ষীরা থেকে একটি আসন কমিয়ে চারটি করা হয়। তখন এই চারটি আসনের মধ্যে তালা-কলারোয়া নিয়ে সাতক্ষীরা-১, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নিয়ে সাতক্ষীরা-২, দেবহাটা, আশাশুনি ও কালিগঞ্জের চারটি ইউনিয়ন নিয়ে সাতক্ষীরা-৩ এবং শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের আটটি ইউনিয়ন নিয়ে সাতক্ষীরা-৪ আসনের সীমানা নির্ধারণ করা হয়।
কিন্তু এবারের চূড়ান্ত গেজেটে সাতক্ষীরা-১ আসনের সীমানা বহাল রেখে সাতক্ষীরা সদরের সাথে দেবহাটাকে যুক্ত করে সাতক্ষীরা-২ আসন, আশাশুনির সাথে কালিগঞ্জকে যুক্ত করে সাতক্ষীরা-৩ আসন ও শুধুমাত্র শ্যামনগর উপজেলা নিয়ে সাতক্ষীরা-৪ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এ হিসেবে সাতক্ষীরা-১ আসনের বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯২ হাজার ১২৯। সাতক্ষীরা-২ আসনের ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৩২ হাজার ৬৮৮। সাতক্ষীরা-৩ আসনের ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৩৭ এবং সাতক্ষীরা-৪ আসনের ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩৬।
এদিকে, সাতক্ষীরার চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতে সীমানা পরিবর্তনের ঘটনায় সাতক্ষীরা-৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা খুশি হলেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সাতক্ষীরা-২ ও সাতক্ষীরা-৩ আসনে।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্মআহবায়ক ও সাতক্ষীরা পৌরসভার সাবেক মেয়র তানজিন আহমেদ চিশতি বলেন, সাতক্ষীরা-২ আসনের সাথে দেবহাটাকে যুক্ত করে অন্যায় করা হয়েছে। এটা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। সাতক্ষীরা পৌরসভা ও সদর উপজেলা নিয়ে সাতক্ষীরা-২ আসনের সীমানা ঠিক ছিল। পরিবর্তন করা হয়েছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে। এটা নিয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।
সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, আমাদের দাবি ছিল সাতক্ষীরার পাঁচটি আসন ফিরে পাওয়া। তা তো হলোই না, বরং নির্বাচনের কমিশনের সিদ্ধান্তে আমাদের জনস্বার্থ বিঘ্ন হবে। কারণ আগে যখন পাঁচটি আসন ছিল, তখন দীর্ঘ সময় একরকম সম্পর্ক গড়ে উঠলো। আবার যখন আসন কমিয়ে চারটি করা হলো, তখনকার সীমানা অনুযায়ীও একটা সম্পর্ক গড়ে উঠলো। এরপর সম্প্রতি যখন খসড়া প্রকাশ করা হলো- তখন একভাবে করা হলো, সেটা নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম হলো। এখন আবার চূড়ান্ত গেজেটে আরেকভাবে করা হলো। এটা সাতক্ষীরার মানুষের সাথে যেন নির্বাচন কমিশন উপহাস করছে। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের ফোরামে আলোচনা হচ্ছে, তবে এখনো করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
অপরদিকে, পূর্ববর্তী সীমানায় ফিরে যাওয়ায় (তৎকালীন সাতক্ষীরা-৫, শ্যামনগর) সাতক্ষীরা-৪ আসনের সাধারণ মানুষসহ রাজনীতিকরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
প্রসঙ্গত, ইসি সংসদীয় আসনের খসড়া প্রকাশের পর সাতক্ষীরা-৩ ও সাতক্ষীরা-৪ আসনের পুনর্বিন্যাসকৃত সীমানা নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও আন্দোলন সংগ্রামে নামে। তখন দেবহাটা ও কালিগঞ্জ নিয়ে সাতক্ষীরা-৩ আসন এবং শ্যামনগর ও আশাশুনি নিয়ে সাতক্ষীরা-৪ আসন গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সর্বসাধারণের দাবি ছিল সাতক্ষীরার পাঁচটি আসন ফিরিয়ে দেওয়া, অন্যথায় গত ১৭ বছরের সীমানা বহাল রাখা।
এমআরএম