লক্ষ্মীপুর এবং নোয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা রহমতখালী খালে এক মাসের ব্যবধানে ঘটে গেল দুটি বড় দুর্ঘটনা। নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এই খালটি।
গত এক মাসের ব্যবধানে খালের এক কিলোমিটারের মধ্যে দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। প্রথম দুর্ঘটনায় ওই খালের পানিতে একটি মাইক্রোবাস ডুবে একই পরিবারের সাতজন ও পরে যাত্রীবাহী বাস ডুবে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
পরপর এ দুটি দুর্ঘটনায় এতো প্রাণহানিতে স্থানীয়দের মধ্যে শোক নেমে আসে।
শুষ্ক মৌসুমে এ খলের তেমন একটা পানি না থাকলেও বর্ষা মৌসুমে পানিতে টইটম্বুর থাকে। সেইসঙ্গে তীব্র স্রোত থাকে খালটিতে। ফলে খালে কোনো যানবাহন পড়ে গেলে দ্রুতই হতাহতের ঘটনা ঘটে। সহজে উদ্ধার তৎপরতাও চালানো দুষ্কর হয়ে যায়।
এছাড়া নোয়াখালী কিংবা লক্ষ্মীপুর জেলার ফায়ার সার্ভিসে কোনো ডুবুরি দল না থাকায় খালের তলদেশে দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু করা যায় না। চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এসে উদ্ধার কাজ শুরু করতেই কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। এতেও হতাহতের ঘটনা বাড়ে বলে মনে করছে স্থানীয় লোকজন।
উদ্ধারকাজে নিয়োজিত লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মী বলেন, নোয়াখালী বা লক্ষ্মীপুরে ডুবুরি দল না থাকায় চাঁদপুর থেকে ডুবুরি দল নিয়ে আসতে হয়।
এদিকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের প্রতি ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সামনে যাত্রীবাহী একটি বাস খালে পড়ে গেলে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার তৎপরতা শুরু করলেও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় বেশ কিছুক্ষণ পর। ঘটনাস্থল থেকে লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিস অফিসের দূরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার। ভাঙা সড়ক এবং যানজট থাকায় দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি তারা।
ঠিক এক মাস আগে গত ৬ আগস্ট ভোরে ঘটনাস্থলের প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজারের ওই খালেই একটি মাইক্রোবাস ডুবে যায়। এতে একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যু হয়। পরিবারটির শিশুসহ ১১ জন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এক প্রবাসীকে নিয়ে লক্ষ্মীপুরের গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন। খালের পানির গভীরতা এবং স্রোত বেশি থাকায় মাইক্রোবাসটি দ্রুত খালের পানিতে ডুবে যায়। দুর্ঘটনার পর ওই গাড়ি থেকে চালকসহ মাত্র পাঁচজন বেঁচে ফিরতে পেরেছেন। উদ্ধারকাজ দ্রুত শুরু করতে না পারায় হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, রহমতখালীর পাশে থাকা লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী মহাসড়কটি একেবারে অরক্ষিত। এছাড়া সড়কের অবস্থাও একেবারে নাজুক। এছাড়া সংকুচিত সড়কে যানবাহনগুলো চলে বেপরোয়া গতিতে। সড়কের দুইপাশে খালপাড়ে গাছ লাগানো থাকলেও বিগত ছয় থেকে সাত বছর আগে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে প্রায়শ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিভিন্ন যানবাহন খালে পড়ে যায়।
উল্লেখ্য, শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টার দিকে নোয়াখালী থেকে ছেড়ে আসা লক্ষ্মীপুরগামী আনন্দ পরিবহনের একটি বাস চন্দ্রগঞ্জের কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সামনে এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রহমতখালী খালে পড়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। এতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়জুল আজিম দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরএ