নড়াইল: স্বাধীনতাযুদ্ধের সূর্যসন্তান বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৫৪তম শাহাদাতবার্ষিকী শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর)।
এ উপলক্ষে সকালে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের বসতভিটা সদরের নূর মোহাম্মদ নগরে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, গার্ড অব অনার প্রদান, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার মিলনায়তনে কোরআন খানি, মিলাদ মাহফিল, স্মরণসভা এবং অসহায় ও দুস্থদের মধ্যে মাঝে তবারক বিতরণ করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সাহসী সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামে (বর্তমান নাম নূর মোহাম্মদ নগর) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মা জেন্নাতা খানম।
নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) যোগদান করেন। ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই যশোর সেক্টরে বদলি হন এবং ল্যান্সনায়েক পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮ নম্বর সেক্টরে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে একটি টহলের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। সঙ্গী ছিলেন আরও চারজন সৈন্য। তারা পার্শ্ববর্তী ছুটিপুর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর নজর রাখছিলেন। শত্রুবাহিনী টের পেয়ে তাদের ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করে। বুঝে উঠতেই নূর মোহাম্মদ সঙ্গীদের নিয়ে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করেন। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। এ সময় পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হলেও তাকে কাঁধে নিয়েই এলএমজি হাতে নিয়ে শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকলে শত্রুপক্ষ পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়। হঠাৎ পাকিস্তানি বাহিনীর একটি মর্টারের গোলা এসে লাগে তার ডান কাঁধে লাগে। মৃত্যু আসন্ন বুঝে তিনি সিপাহী মোস্তফার হাতে এলএমজি দিয়ে তার রাইফেল চেয়ে নেন। আহত নান্নু মিয়াকে নিয়ে সবাইকে চলে যেতে বলেন। তারপর নূর মোহাম্মদ মৃত্যুপথযাত্রী হয়েও ঝাঁপিয়ে পড়েন হানাদারদের ওপর। এখানেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন।
যশোরের শার্শা থানার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত হন তিনি।
আরবি