নাটোরে চিকিৎসক জনসেবা হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ডা. এ এইচ এম আমিরুল ইসলামের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। নিহতের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) মো. আসাদুল ইসলাম আসাদসহ ৬ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, চাকরিচ্যুত হওয়ার পর প্রতিশোধ নিতে আসাদ বগুড়া থেকে একটি বোরকা ও দুটি ছুরি কিনে নাটোরে ফেরেন। গত ৩১ আগস্ট রাতে ফিল্মি কায়দায় বোরকা পরে হাসপাতালে প্রবেশ করে তিনি ডাক্তারের কক্ষের খাটের নিচে লুকিয়ে থাকেন। ভোর সাড়ে ৩টার দিকে গভীর ঘুমে থাকা ডা. আমিরুলের গলা কেটে হত্যা করেন আসাদ। শুধু তাই নয়, মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার গোপনাঙ্গও কেটে ফেলেন তিনি। এরপর ভোর সোয়া ৬টার দিকে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান এবং যাওয়ার পথে বোরকাটি সিংড়া আইসিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এলাকার নদীতে, আর দুটি ছুরি নন্দীগ্রাম এলাকায় ফেলে দেন।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিহত চিকিৎসকের জনসেবা হাসপাতালে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন। এসময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভিস্টিগেশনের (পিবিআই) নাটোরের পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মাহমুদা শারমিন নেলি, সদর থানার ওসি মো. মাহবুর রহমান ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. হাসিবুল্লাহ হাসিব।
পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার পর প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্ত শুরু হয়। একপর্যায়ে হাসপাতালের স্টাফ আসাদুল ইসলামকে মূল আসামি হিসেবে শনাক্ত করা হয়। আসাদ বগুড়ার ধুনট উপজেলার বাসিন্দা। ২০২৪ সালে এসএসসি পাসের পর তিনি টিএমএসএস মেডিকেলে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে যোগ দেন। পরে নাটোরে আমিরুল ইসলামের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে প্রায় তিন বছর কর্মরত ছিলেন। এ সময় হাসপাতালের এক নার্সকে কেন্দ্র করে ডা. আমিরুল, ওই নার্স ও আসাদের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এর জেরেই গত ২৫ আগস্ট আমিরুল ওই নার্স ও আসাদকে মারধর করে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রতিশোধের নেশায় আসাদ এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। আদালতে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবে বলেও নিশ্চিত করেছে পুলিশ। হত্যায় ব্যবহৃত দুটি ছুরি ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে, তবে বোরকাটি নদীতে ফেলে দেয়ায় এখনো উদ্ধার সম্ভব হয়নি।
এদিকে মঙ্গলবার আসরের নামাজের পর নাটোর পৌরসভার ঈদগাহ মাঠে জানাজার নামাজ শেষে স্থানীয় গাড়িখানা কবরস্থানে ডা. আমিরুলকে দাফন করা হয়। জানাজায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিনসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
অন্যদিকে নিহত চিকিৎসকের স্ত্রী তাসমিন সুলতানা বাদী হয়ে সোমবার রাতেই অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে নাটোর থানায় মামলা দায়ের করেন।
ডা. আমিরুল হত্যার প্রতিবাদে নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক প্রকাশ করেছেন।
এমজে