ঢাকা, সোমবার, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

যুবদল নেতার ল্যাবে রোগী না পাঠানোয় চিকিৎসককে হেনস্তা, ভিডিও ভাইরাল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৫৯, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫
যুবদল নেতার ল্যাবে রোগী না পাঠানোয় চিকিৎসককে হেনস্তা, ভিডিও ভাইরাল চিকিৎসককে হেনস্তা, ভিডিও ভাইরাল

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ল্যাবে রোগী না পাঠানোয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শেখ মো. মাহমুদুর রহমানের অফিসে ঢুকে তাকে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে যুবদলের এক নেতার বিরুদ্ধে।  

এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে অভিযুক্ত হাতিয়া পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক মোমিন উল্যা রাসেলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জেলা যুবদল।

 

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন জেলা যুবদলের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আজিম সুমন।  

এর আগে গতকাল রোববার (৩১ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওই চিকিৎসককে হেনস্তা করা হয়। একই দিন রাতে অভিযুক্ত যুবদল নেতাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয় জেলা যুবদল।      

ভুক্তভোগী চিকিৎসক ও স্থানীয়রা জানায়, হাতিয়া পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক মোমিন উল্যাহ রাসেলসহ কয়েকজন যৌথ মালিকানায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন ওছখালীতে হাতিয়া পপুলার ডায়াগনস্টিক নামে একটি ল্যাব পরিচালনা করে আসছেন। গতকাল রোববার ওই ল্যাবের পার্টনার রাফুল পার্শ্ববর্তী মেঘনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি ল্যাবে রোগী পাঠানোয় ডা. শেখ মো. মাহমুদুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বলেন কেন তাদের কাছে রোগী পাঠানো হয় না।  

এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রাফুল চিকিৎসক মাহমুদুর রহমানকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দেন। তখন চিকিৎসক বলেন কীভাবে পোড়াবেন সামনে আসেন। তাৎক্ষণিক একই দিন দুপুর ১২টার দিকে যুবদল নেতা রাসেল ও রাফুলসহ তিনজন মারমুখী হয়ে ডা. শেখ মো. মাহমুদুর রহমানের অফিস কক্ষে ঢুকে পড়েন। পরে তার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। পুলিশের সামনে চিকিৎসক মাহমুদুর রহমানকে মারধর করতে উদ্যত হয় যুবদলের ওই নেতারা। ওই সময় হেনস্তার শিকার চিকিৎসক জীবন বাঁচাতে নিজের মোবাইল ফোনে ১৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ধারণ করেন। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায় আমার জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই অবশ্যই আমি ভিডিও করব।  

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিয়া পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক রাসেল বলেন, ওখানে আমাকে অপমান-অপদস্ত করা হয়েছে। ডাক্তার মানছুর, রিয়াজ, ডিউটি ডাক্তার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মানসী রায় সরকারের থেকে বক্তব্য নেন। প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে আমাকে ভিকটিম বানানো হয়েছে। উনারাই বলে দেবেন ডাক্তার কি আচরণ করছে।

এদিকে অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে হাতিয়া পপুলার ডায়াগনস্টিকের পার্টনার নাজমুল হোসেন রাফুল বলেন, ডাক্তার মাহমুদুর রহমান অকারণে রোগীদের বিভিন্ন ল্যাব টেস্ট দিয়ে থাকেন। আল্ট্রা টেস্টগুলো তার স্ত্রীকে দিতে বাধ্য করেন।    

জেলা যুবদলের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আজিম সুমন আরও জানান, একটি ভিডিও আমরা পেয়েছি, এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আরেক গ্রুপের বক্তব্য হচ্ছে এটা নিয়ে একটু তর্কবিতর্ক হইছে। আমরা তাকে কারণ দর্শনো নোটিশ দিয়েছি। নোটিশের জবাব দুই দিনের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।  

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মানসী রায় সরকারের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।  

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা জানান, ঘটনা কি ঘটেছে তা ভিডিওতে দেখেছেন। উনি ওনার সরকারি চেম্বারে বসে টেস্টের জন্য রোগী রেফার করেন মেঘনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে । পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে এসে বলেছে আপনি প্রতিটি রোগী পাঠান মেঘনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। পপুলারেও তো পাঠাতে পারেন, এটা নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে।  

চিকিৎসককে তার অফিসে ঢুকে হেনস্তা ও হত্যার হুমকির প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলাউদ্দিন জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই, জেনে জানাতে হবে। পরে তিনি আবার জানান, মানববন্ধন হচ্ছে, কবে ওই ডাক্তার একা একা মানববন্ধন করছেন।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।