কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর: রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত রজনী ইসলামের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল ১০টায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
জানাজায় দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হাই সিদ্দিকী, হোগলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম চৌধুরীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং এলাকাবাসী অংশ নেন।
নিহত রজনী ইসলাম (৪৫) সাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল ইসলামের স্ত্রী। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জননী রজনী রাজধানীর উত্তরায় সপরিবারে বসবাস করতেন।
জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে মেয়ে ঝুমঝুমকে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে তিনি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হন রজনী ইসলাম। ঝুমঝুম মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে প্রাণে বেঁচে গেছে।
রজনীর বড় ছেলে এস এম রুবাই এ বছর ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ছোট ছেলে এস এম রোহান (ষষ্ঠ শ্রেণি) সেদিন অসুস্থ থাকায় স্কুলে যায়নি।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রজনীর স্বামী জহুরুল ইসলাম দুর্ঘটনার সময় ব্যবসার কাজে চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন। স্ত্রীর মৃত্যু খবর পেয়ে তিনি বিমানে করে ঢাকায় ফিরে আসেন। সোমবার রাতে ঢাকার সামরিক হাসপাতালে রজনীর মরদেহ শনাক্ত করা হয়।
রাত সাড়ে ৯টায় মরদেহ পরিবারের কাছে হন্তান্তর করা হয় এবং রাত ১০টার দিকে মরদেহ নিয়ে স্বজনেরা দৌলতপুরের উদ্দেশে রওনা হন।
পথে ভোরে মেহেরপুরের গাংনি উপজেলার বাওট গ্রামে রজনীর বাবার বাড়িতে কিছুক্ষণ রাখা হয় মরদেহ। পরে সকাল ৭টায় সাদিপুর গ্রামে পৌঁছায়।
গ্রামে মরদেহ পৌঁছানোর পর শ’শ’ মানুষ তাকে একনজর দেখতে ভিড় করেন। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। শিশুসন্তানদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।
রজনীর স্বামী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়েকে আনতে গিয়ে রজনী যে আর ফিরবে না, তা কল্পনাও করিনি। মাথার পেছনে আঘাত ছিল, তবে শরীরের কোথাও পোড়ার চিহ্ন ছিল না। সম্ভবত বিমানের কোনো অংশ মাথায় আঘাত করেছিল। এটা একেবারেই অনাকাঙ্খিত। ’
এদিকে, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের বাওট গ্রামে বাবার বাড়িতে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ভোরে রজনী ইসলামের মরদেহ পৌঁছালে শুরু হয় হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি। কান্নায় ভেঙে পড়েন মা, ভাই-বোনসহ স্বজন ও প্রতিবেশীরা। পুরো গ্রামজুড়ে নেমে আসে গভীর শোক।
নিহত রজনী ইসলামম টমুড়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আবদুল হামিদের মেয়ে। সোমবার তার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর পরই বুকফাটা আর্তনাদে কাঁদতে থাকেন পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা। প্রতিবেশিসহ আশপাশের এলাকা থেকে দলে দলে মানুষ ছুটে আসেন রজনী ইসলামের বাবার বাড়িতে। পরিবারের সদস্যদের আর্তনাদে অনেকে তখন কান্না ধরে রাখতে পারেননি।
মঙ্গলবার ভোর হতেই একই দৃশ্যের অবতারণা হয়। এরই মাঝে রজনী খাতুনের মরদেহ এসে পৌঁছায় বাড়িতে। তখন সবার মাঝে শোকের মাতম শুরু হয়। রজনীর মৃত্যুতে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় শ্বশুরবাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামে। সেখানেই তাকে দাফন করা হয়
এসএইচ