গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত ৫ জনের মধ্যে তিনজনের লাশ আদালতের নির্দেশে কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে গোপালগঞ্জ গেটপাড়াস্থ পৌর কবরস্থান থেকে দুইজনের এবং টুঙ্গিপাড়া থেকে একজনের লাশ উত্তোলন করা হয়।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মো. সাজেদুর রহমান বলেন, মামলার বাদীরা গতকাল রোববার আদালতে নিহতদের সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উত্তোলনের আবেদন করেন। পরবর্তীতে আদালত ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে নিহত রমজান কাজী, ইমন তালুকদার ও সোহেল রানার লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের জন্য নির্দেশ দেন।
সোমবার দুপুর ১টার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল মুন্সি ও রন্টি পোদ্দারের উপস্থিতিতে রমজান কাজী, ইমন তালুকদার ও ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ দস্তগীরের উপস্থিতিতে সোহেল রানার লাশ উত্তোলন করে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া অপর দুইজনের মধ্যে দীপ্ত সাহার লাশ হিন্দু ধর্মীয় মতে সৎকার ও রমজান মুন্সীর লাশের ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন করা হয়।
এদিকে, গোপালগঞ্জে ঘটে যাওয়ায় উদ্ভুত পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। জীবনযাত্রাও স্বাবাবিক হতে শুরু হওয়ায় রাস্তায় জনসমাগম বাড়তে শুরু করেছে। কারফিউ ও ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়ার পর জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তির বাতাস বইছে। তবে গ্রেপ্তার আতঙ্কে শুধু যুবকরাই নয়, বয়ষ্করাও এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়েছে।
সোমবার জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শহরের বিভিন্ন ওষুধের দোকান, খাবারের দোকানসহ বিভিন্ন দোকান খুলতে শুরু করেছে। অনেকেই গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। শহরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালত খুলেছে। তবে লোকজনের উপস্থিতি কম। অনেকেই তাদের সন্তানকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন।
অন্যদিকে, গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাকর্মী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কোনো নিরীহ শান্তি প্রিয় নাগরিক যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে প্রশাসনের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে জেলা বিএনপি।
সোমবার বেলা পৌনে ১১টায় শহরের বড়বাজার পৌর মার্কেটে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান। এ সময় জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কাজী আবুল খায়েরসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গত বুধবার গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও পথসভা ভণ্ডুল করতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের শত-শত নেতাকর্মী হামলা চালায়। পরে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দিনভর চলা সংঘর্ষে ৫ যুবক নিহত ও পুলিশ সাংবাদিকসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪ হত্যা মামলাসহ মোট ৮টি মামলা হয়েছে। এতে ৮ হাজার ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩১০ জনকে। তাদের মধ্যে দুই শতাধিক আসামিকে বাইরের জেলার কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জেএইচ