যশোর: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের সহায়তায় নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে যশোর জেলা বিএনপি। এককালীন আর্থিক অনুদান, চিকিৎসা সহায়তা, ঈদ উপহার ছাড়াও পরিবারগুলোর যে কোনো প্রয়োজনে দলটির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
পাশাপাশি ২০০৯ সাল থেকে সর্বশেষ ২০২৪ এর ৫ আগস্ট-পতনের আগ পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত নেতাকর্মীদের পরিবারের পাশে রয়েছে জেলা বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনকি সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বাংলানিউজকে বলেছেন, যতদিন প্রয়োজন ততদিন আহতদেরকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হবে। তাছাড়া, বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারলে ফ্যাসিস্টবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে দেশের সকল শহীদ ও আহতদের পরিবারকে পুনর্বাসনের কর্মসূচি রয়েছে।
জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ যশোরের শার্শা উপজেলার মো. আব্দুল্লাহ, কেশবপুরের তৌহিদুর রহমান রানা এবং ঝিকরগাছা উপজেলার ইমতিয়াজ আহমেদ জাবেরের পরিবারকে এককালীন এক লাখ টাকা করে প্রদান করা হয়েছে।
এক লাখ টাকা করে প্রদান করা হয়েছে গণঅভ্যুত্থানে আহত যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের এনাম সিদ্দিকী এবং শহরের ষষ্টিতলার ইমন কবীরের চিকিৎসা সহায়তায়।
নিহতদের পরিবার ও আহতদের চিকিৎসায় যশোর বিএনপির দেওয়া অর্থ প্রদান করেছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি যেেশারের এক দলীয় কর্মসূচিতে এসব অর্থ প্রদান করেন। সেই কর্মসূচিতে শহীদ পরিবার, আহত ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।
অনুদান প্রাপ্তদের মধ্যে ষষ্টিতলার ইমন কবিরকে আরও ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন বিএনপি নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
এনাম সিদ্দিকীর চিকিৎসা এখনো চলমান এবং এটি দীর্ঘ মেয়াদী বলে জানিয়েছেন যশোর সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন। তিনি বলেছেন, প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা চিকিৎসা খরচ লাগে এনামের। সকল টাকা জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়। এছাড়া, প্রয়োজনীয় মেডিকেল টেস্ট ও অন্যান্য কিছু ব্যয়ও নির্বাহ করা হয় দল থেকে।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘স্থানীয় এক বিএনপি কর্মীর কাছ থেকে এনাম সিদ্দিকীর বিষয়টি পরে জানতে পারি। খোঁজ নিয়ে জানি তিনি সরকারের কাছ থেকে এক লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন ফ্যাসিস্টের গুলিতে। দলের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা দেওয়া ছাড়াও আমি জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে এনামের জন্য আরও ২০ হাজার টাকার ব্যবস্থা করেছি। ’
এর বাইরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দেওয়া ঈদ উপহার প্রতিটি শহীদ পরিবার ও আহতদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম, অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ জেলা নেতৃবৃন্দ। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেও এসব পরিবারগুলোর জন্য বিশেষ উপহার প্রদান করা হয়েছে।
জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ জানান, অভুত্থানে অংশ নেওয়াদের মধ্যে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের মরদেহ যশোরে পৌঁছানোমাত্র ছুটে গেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তারা ওই পরিবারগুলোর পাশে থেকে সৎকারের সকল ব্যবস্থা করেছেন। পরিবারগুলোকে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি তাদেরকে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছেন।
এছাড়া, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যশোরের আট উপজেলায় আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৫৫ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্টের পতনের দিন যশোরে জাবের হোটেলে উদ্ধার অভিযানে যেয়ে যারা নিহত হয়েছেন তাদেও সকলকেও শহীদ গণ্য করে বিএনপি।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেছেন, এসব নেতাকর্মী সবাই দেশ ও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন। সে কারণে তারা সকলেই শহীদ। ফলে তাদের এই আত্মত্যাগের কথা দল হিসেবে বিএনপি কখনো ভুলতে পারে না। ভোলেওনি। সে কারণে প্রতিটি শহীদের পরিবারের সুখ-দুঃখে পাশে থাকে দল।
দলের নিহত এসব নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতা, বিয়ে, শিক্ষা, ঈদ, রোজাসহ যে কোনো উপলক্ষে যশোর জেলা বিএনপি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এবার কোরবানির দ্বিতীয় দিনেও আলাদাভাবে গরু কোরবানি করে সদর উপজেলার শহীদ নেতাকর্মীদের বাড়িতে মাংস পৌঁছে দিয়েছে যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়াদেরকে নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, তাদের আত্মত্যাগ বাংলাদেশের মানুষ আজীবন সম্মানের সাথে স্মরণ করবে।
এই অভ্যুত্থানে যারা শহীদ বা আহত হয়েছেন তাদের জন্য বিএনপির একটা পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, এই পরিবারগুলো যাতে স্বচ্ছ ও সম্মানের জীবনযাপন করতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হবে।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত জানান, তারেক রহমান বলেছেন, ফ্যাসিস্ট বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে দেশের সকল শহীদের নামে স্ব স্ব জেলায় রাস্তা, প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনার নামকরণ করা হবে।
এদিকে, আগামী ২০ জুলাই যশোর পৌর পার্কে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যশোরের সকল শহীদদের নামে একটি করে গাছের চারা রোপন করা হবে। প্রতিটি গাছের সাথে শহীদের নাম সংরক্ষণ করা হবে। গাছগুলো যাতে ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে তার জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএইচ