জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা ফ্যাসীবাদকে হঠাতে সক্ষম হয়েছি। তবে শুধু ফ্যাসীবাদী সরকারের পতন হলেই হবে না।
দেশের মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে। গণঅভ্যুথ্যানের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। এই গণঅভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছে তাদের শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। সংবিধানের স্বীকৃতি থাকতে হবে। এর জন্যই প্রয়োজন জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ। আমরা কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র-টালবাহানা মেনে নেব না। কোনো বিকল্প চিন্তার সুযোগ নেই।
সোমবার (০৭ জুলাই) দুপুর পৌনে ৩টার সময় নাটোর শহরের মাদরাসা মোড়ে স্বাধীনতা চত্বরে পথসভায় তিনি একথা বলেন।
এর আগে দুপুর ১টার দিকে রাজশাহী থেকে সড়ক পথে নাটোরে এসে পৌঁছান দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
জুলাই আন্দোলনের এসব নেতাদের নাটোর-রাজশাহী সীমান্ত এলাকা থেকে নাটোরের নেতাকর্মীরা ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বাগত জানান। দেশ গড়তে এনসিপির জুলাই পদযাত্রার সপ্তম দিনে তারা বর্ণাঢ্য পদযাত্রা নিয়ে শহরের স্টেশন বাজার হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে শহরের মাদরাসা মোড়ের স্বাধীনতা চত্বরের পথসভায় মিলিত হন। সেখানে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন নাহিদ ইসলাম।
পথসভায় নাহিদ আরও বলেন, এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে হবে যেখানে গণতন্ত্র থাকবে, সমতা থাকবে, ইসসাফ থাকবে। একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়াই নতুন প্রজন্মের ছাত্র জনতার আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিজয়ের পর থেকে নানা পক্ষ সেই আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে গিয়েছে। নাটোরের কর্মসূচিতে ন্যাক্কারজনকভাবে বাধা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। মাত্র এক বছর আগে ব্যানার ছিঁড়ে কর্মসূচিতে যারা বাঁধা দিয়েছিল বাংলার জমিতে তাদের ঠাঁই হয় নাই। এখনো শিক্ষা না নিলে বাঁধা প্রদানকারীদের পরিণতিও তাদের মতোই হবে।
তিনি বলেন, নাটোরে আটজন শহীদ রয়েছেন। তারা গণঅভ্যুত্থানে দেশকে ফ্যাসীবাদমুক্ত করতে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করে নতুন করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। আমরা সেই শহীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। শহীদরা যে আকাঙ্ক্ষার জন্য, নতুন বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়েছিল আমরা যেন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
বাংলাদেশের মৌলিক কাঠামোতে যদি হস্তক্ষেপ করা হয়, মৌলিক সংস্কারে যদি বাধা দেওয়া হয় তাহলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
জুলাই পথযাত্রার এই পথসভায় উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন-এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনুভা জাবীন, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, কেন্দ্রীয় এনসিপির সদস্য আসিফ মোস্তফা জামাল, নাটোর জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ জার্জিস কাদির ও সিনিয়র যুগ্ম সমন্বয়কারী নাটোর চেম্বারের সভাপতি আব্দুল মান্নাফ প্রমুখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা শারওয়ার নিভা, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
পথসভা শেষে স্থানীয় একটি রেস্তোরায় শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বিকেলে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয় জুলাই পদযাত্রার গাড়ি বহর।
এদিকে নাটোরের বনপাড়ায় এনসিপির নেতারা এলে দেখে নেওয়া হবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোববার এমন প্রচারনা চালানোর কারণে নাশকতার আশংকায় খোরশেদ আলম নামে একজনকে আটক করেছে নাটোরের গোয়েন্দা পুলিশ।
অপরদিকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নাটোরে আগমনে শুভেচ্ছা জানিয়ে শহরের লাগানো অনেক ব্যানার ফেস্টুন রোববার দিনগত গভীর রাতে দুস্কৃতকারীরা ছিঁড়ে ফেলেছে। নাটোর স্টেশন বাজার ও নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ এলাকায় এসব ব্যানার ফেস্টুন নষ্ট করা হয়।
আরএ