বগুড়া: বগুড়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের মধ্যে মারামারি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহরের পৌর পার্কে টিটু মিলনায়তনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন আহত হলেও তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করে নীরব ভূমিকায় ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, বুধবার বিকেলে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার ও তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের’ দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি।

অপরদিকে, এ আয়োজনের বিরোধিতা করে একই স্থানে পাল্টা প্রতিবাদ কর্মসূচি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ।
বিকেল ৫টার দিকে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, যুগ্ম সদস্য সচিব তাহসিন রিয়াজসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে ওঠেন। সমাবেশ শুরু হলে কিছুক্ষণ পরেই ছাত্র আন্দোলনের একাংশ “ভুয়া ভুয়া” স্লোগান দিতে দিতে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করে। এনসিপির নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দিলে প্রথমে কথা-কাটাকাটি এবং একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। এরপর পরপর তিন দফা মারামারি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এমনকি সারজিস আলম বক্তব্য দেওয়ার সময়ও উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলতে থাকে। তবে এ সংঘর্ষ নিয়ে কোনো পক্ষের সরাসরি বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সারজিস আলম বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশে আর রাজনীতি করতে পারবে না। তাদের যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই প্রতিহত করা হবে। বগুড়া থেকেই প্রতিরোধের সূচনা হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে গত ১৬ বছরে বগুড়া সবদিক থেকে বঞ্চিত হয়েছে। চাকরি, প্রমোশন, অবকাঠামো-সবখানেই বৈষম্য করা হয়েছে। বগুড়ার বিমানবন্দর সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি, আধুনিক হাসপাতালকে তৃতীয় শ্রেণির প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম থাকলেও কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা হয় না। ’ তিনি ঢাকা থেকে বগুড়ায় সরাসরি রেললাইন চালুর দাবিও জানান।

বক্তৃতায় তিনি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান মিলনের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি জেলার ঐতিহ্যবাহী প্যালেস মিউজিয়াম ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা দখল করেছেন। বগুড়ায় এ রকম অসংখ্য আওয়ামী দালাল রয়েছে তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক যুথী অরণ্য প্রীতি।
বক্তব্য দেন এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব তাহসিন রিয়াজ, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সাকিব মাহদী, কেন্দ্রীয় সদস্য রফিকুল ইসলাম পলক, আবদুল্লাহ আল মুহিন, নাজমুল হক, জেলা সংগঠক আহমেদ সাব্বির, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বগুড়া জেলা সদস্য সচিব সাকিব খান, ওয়ারিয়র্স জুলাইয়ের আহ্বায়ক মো. মুশফিক, শহীদ সেলিম মাস্টারের ভাই উজ্জ্বল হোসেন ও শহীদ রাতুলের ভাই হামজা।
বক্তারা বলেন, আমাদের একটাই দাবি-আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তারা ১৬ বছর ধরে দেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। বাংলার মাটিতে তাদের ঘৃণার রাজনীতি আর হতে দেওয়া যাবে না।
সমাবেশ শেষে সারজিস আলমের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাতমাথার মুক্তমঞ্চের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল থেকে নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ তাদের বিচার দাবিতে নানা স্লোগান দেন।
কেইউএ/জেএইচ


 
                                             
                 
                 
                 
                 
                 
                 
                 
                 
                