ঢাকা: দানবের সঙ্গে মানবের কোনো সংলাপ হতে পারে না জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, আগে নাশকতা বন্ধ হোক, তারপর রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা হবে। নাশকতা বন্ধ হওয়ার আগে সংলাপের কথা চিন্তা করতে পারছি না।
দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ যত কঠিনই হোক না কেন সরকারকে কঠিন পথই গ্রহণ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চলমান সহিংসতা নিয়ে রোববার (০৮ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ শান্তি চায়, সরকারও শান্তি চায়-স্বাভাবিকতা চায়। খালেদা জিয়া নাশকতা-সন্ত্রাস পরিহার করে শান্তির পথে আসলে শান্তি প্রতিষ্ঠা সহজ হতো। যেহেতু খালেদা জিয়া অশান্তির পথটাই আঁকড়ে ধরছেন, তাই শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজটি একটু কঠিন। তবে যত কঠিনই হোক না কেন, সরকারকে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কঠিন পথই গ্রহণ করতে হচ্ছে, হবে…। আগুন সন্ত্রাসীদের পরাজিত ও আত্মসমর্পণে বাধ্য করেই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটা দেশের চ্যালেঞ্জ, মানুষের চ্যালেঞ্জ, সরকারের চ্যালেঞ্জ। সরকার এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছে।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নামে বুদ্ধিজীবী-রাজনীতিক গোলটেবিল বৈঠকের প্রস্তাবের সমালোচনা করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ইদাংনিং বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ এখন একটু সরব হয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মহাজোট সকরকার গঠনের পর থেকে সরকার উৎখাতের জন্য উস্কানি-ষড়যন্ত্র, যুদ্ধপরাধের বিচার শুরু হবার পর থেকে নাশকতা-অন্তর্ঘাতের সূত্রপাত হলেও তখন দেশের এই বুদ্ধিজীবীরা মুখ বন্ধ করেছিলেন।
“এই বুদ্ধিজীবীরা এখন সংলাপ নিয়ে যতটা সরব, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারার বিরুদ্ধে ঠিক ততটাই নীরব। দেশের এই বুদ্ধিজীবীগণের সামান্য মায়া থাকলে তারা তো খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে তাকে বলতে পারতেন, ‘আপনি সবার আগে পুড়িয়ে মানুষ মারা বন্ধ করুন। তারপর রাজনৈতিক সমস্যা যদি কিছু থাকে তা নিয়ে আমরা রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করবো। ’
তারা প্রশাসনিক পদক্ষেপের সমালোচনা করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপ আর আগুনে পোড়ানোর ঘটনাকে এক পাল্লায় মেপে আগুনে পোড়ানোকে বৈধতা দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।
তারা আসলে কী চান? বুদ্ধিজীবী বন্ধুরা আরো ভালভাবে হোমওয়ার্ক করেন। তারা কী চাচ্ছেন?”
খালেদা জিয়ার ‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছা পর্যন্ত হরতাল-অবরোধ অব্যাহত থাকবে বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তারও সমালোচনা করেন তথ্যমন্ত্রী।
হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির নামে নাশকতায় হতাহতদের জন্য খালেদা জিয়ার সমবেদনা জানানো ‘ভূতের মুখে রাম-নাম’ বলে মন্তব্য করেন ইনু।
“খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়কে ঘাঁটি বানিয়ে এবং তার ছেলে তারেক রহমান লন্ডন থেকে ৫ জানুয়ারির আগে থেকে ভিডিও বার্তায় প্রকাশ্যে নাশকতা-অন্তর্ঘাতের উস্কানি দিয়েছেন, এবং দিচ্ছেন। ”
খালেদা জিয়া তার আন্দোলনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছে, এ ব্যাপারে তার সামান্যতম ভ্রুক্ষেপ নেই।
“উনি যদি নাশকতায় না জড়িত থাকেন, তাহলে ঘর থেকে বেরিয়ে প্রকাশ্যে থাকুন। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মাঠে থাকুন। ”
খালেদা জিয়ার ব্যাপারে সরকার নীরব কেন- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সরকার নীরব নয়, প্রশাসন যথা সময়ে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
এই নাশকতা অচিরেই বন্ধ হবে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।
মতিঝিলে অবস্থান করা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, উনি জামায়াতের পথে হাঁটছেন। তার ব্যাপারে মন্তব্য না করাটাই ভালো।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা তছির আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৫/আপডেট ১৪২২ ঘণ্টা