ঢাকা, সোমবার, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৮ মহররম ১৪৪৭

রাজনীতি

বিএনপি নেতৃত্বের চরিত্রহননের চেষ্টা চলছে: ফখরুল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:০৪, জুলাই ১৪, ২০২৫
বিএনপি নেতৃত্বের চরিত্রহননের চেষ্টা চলছে: ফখরুল সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানী ঢাকার মিটফোর্ডে লালচাঁদ সোহাগ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত অপপ্রচার ও চরিত্রহননের চেষ্টা চলছে।

মির্জা ফখরুল জানান, এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধানের জন্য বিএনপি উপযুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যারা প্রকৃত সত্য উদঘাটন করবেন এবং তা জনসম্মুখে প্রকাশ করবেন।

সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেললে লিখিত বক্তব্যে পাঠকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটি বিবেকবান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। এ হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও যাদের নামে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে দলীয় শৃঙ্খলার আলোকে আজীবন বহিষ্কারের মতো সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এজাহারের অসঙ্গতি ও আইনি পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব জানান, নিহত সোহাগের পরিবারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে মামলার এজাহারের অসঙ্গতি প্রসঙ্গে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, উল্লেখিত তিন অপরাধীর নামের স্থলে এমন তিনজনের নাম সংযুক্ত করা হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযোগ নেই।

মির্জা ফখরুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি, নৃশংসতার মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার তো দূরের কথা, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এখনও তাদের নাম-পরিচয় পর্যন্ত উদঘাটনে সক্ষম হয়নি।

মির্জা ফখরুল এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং দ্রুত বিচারের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, বিএনপির দৃঢ় দলীয় অবস্থান থাকা সত্ত্বেও একটি চিহ্নিত মহল পরিকল্পিতভাবে তাদের দল এবং শীর্ষ নেতৃত্বের শালীনতা ও চরিত্রহননের দুঃসাহস প্রদর্শন করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কোনো রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার হচ্ছে কিনা এবং এর মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশকে বিঘ্নিত করার জন্য বিশেষ কোনো মহলের প্ররোচনায় এটিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।

তিনি বলেন, কুমিল্লার মুরাদনগরে সংঘটিত তিনটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড, কুমিল্লায় মসজিদের ইমাম হত্যা, খুলনায় যুবদল নেতা মাহবুব মোল্লাকে হত্যা ও রগকাটার মতো হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে সবার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর সমমানের ছিল কিনা সে প্রশ্নও তোলা যেতে পারে।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে অসংখ্য মানুষের সামনে, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নিকটবর্তী অবস্থান থাকা সত্ত্বেও এরূপ ঘটনার কোনো প্রতিরোধ না হওয়া এবং বিনা বাধায় ভিডিও ধারণ অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়।

তিনি বলেন, পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্য উদ্ঘাটিত হয়নি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, ৯ জুলাইয়ের ঘটনা ১১ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেটে ছড়ানো শুরু হয়। নির্দিষ্ট কিছু সোশ্যাল মিডিয়া আইডি ও পেজ থেকে আগে থেকেই তৈরি করে রাখা ফটোকার্ডগুলো অনলাইনে ছড়ানো শুরু হয়, যা প্রমাণ করে এ অপপ্রচার ক্যাম্পেইন শুরুর আগে থেকেই সামগ্রী তৈরি করে রাখা হয়েছিল।

বিএনপি মহাসচিব দৃঢ়ভাবে বলেন, অপরাধীর জন্য কোনো অনুকম্পার সুযোগ যেমন নেই তেমনি পক্ষ অবলম্বনের প্রশ্নই উঠে না। শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় পদ থেকে অপসারণের মতো দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপকে স্বাগত না জানিয়ে পরিকল্পিতভাবে চরিত্র হনন দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

তিনি বলেন, নিহত সোহাগের রাজনৈতিক পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং তিনি দেশের একজন নাগরিক, যিনি সন্ত্রাসের নির্মম শিকার। তাই তার পরিবারের সঙ্গে বিএনপিও এ অপকর্মের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে। হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্রুত কার্যকর করার বিষয়ে বিএনপির দলীয় অবস্থান সুদৃঢ় ও অপরিবর্তিত।

মির্জা ফখরুল জানান, এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধানের জন্য বিএনপি উপযুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি 'তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটি' গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যারা প্রকৃত সত্য উদঘাটন করবেন এবং তা জনসম্মুখে প্রকাশ করবেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট এবং জাতীয় নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত ও অনিশ্চিত করতে চান এবং প্রকারান্তরে ফ্যাসিবাদ উত্থানের পথ সৃষ্টি করতে চান, তাদের চিহ্নিত করা ও প্রতিহত করার প্রত্যয়ও একইসঙ্গে উচ্চারণ করতে চাই।

তিনি বলেন, বিএনপির অবস্থান বরাবরের মতোই স্পষ্ট-অপরাধীর কোনো দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না। ব্যক্তির অপরাধের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলেন, বিকৃত রুচির কিছু গোষ্ঠী তাদের অশ্লীল ও কদর্য মানসিকতা কোমলমতি শিশু-কিশোরদের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত করিয়ে আগামী প্রজন্মের মূল্যবোধ ধ্বংস করছে।

মির্জা ফখরুল দৃঢ়ভাবে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবনতির ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে দায়িত্বশীল সব রাজনৈতিক দল সচেতন হবেন। রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত এ জাতীয় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ বাধাগ্রস্ত হলে তার দায় সংশ্লিষ্টদেরই বহন করতে হবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, গুটিকয়েক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারীর অপচেষ্টায় বাংলাদেশ ব্যর্থ হতে পারে না। তিনি ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যকে বিনষ্ট করার যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার এবং প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সব গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের অঙ্গীকার করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্যে বলেন, পতিত স্বৈরাচার আর কাপুরুষ ষড়যন্ত্রকারীদের মিলিত অপচেষ্টা সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং আগামীর বাংলাদেশ গড়ার পথে যদি কোনো বাধা হয়ে আসে তবে সেটা ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক শক্তির মাধ্যমে প্রতিহত করা হবে।

ইএসএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।