ঢাকা: বিএনপি কখনো প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ চায়নি। বরং শুরু থেকেই এই সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে দলটি।
বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার (২৪ মে) রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে দলটিতে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রবেশ করেন। বৈঠক শেষে রাত পৌনে ৯টার দিকে যমুনার সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন খন্দকার মোশাররফ।
বৈঠকের বিষয়বস্তু আগে জানানো হয়নি উল্লেখ করে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি শুরু থেকেই একটি সুস্পষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপের দাবি জানিয়ে আসছে। এই দাবি আমরা প্রকাশ্যেই করে এসেছি। পাশাপাশি, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বিতর্কিত সদস্যদের বাদ দিয়ে নতুন করে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছি।
খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী রাজনৈতিকভাবে, ব্যক্তিগতভাবে এবং পারিবারিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে। তাই এই বিচারকার্য সম্পন্ন করার জন্য বিএনপি যখন ক্ষমতায় যাবে, তখন একটি স্বাধীন বিচারব্যবস্থার মাধ্যমেই এসব বিচারের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন বিষয়ে সংস্কার কার্যক্রম অবিলম্বে শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দ্রুত একটি রোডম্যাপ প্রণয়নের দাবি আমরা জানিয়েছি। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে।
নির্বাচন বিলম্বিত হলে দেশে স্বৈরাচার ফিরে আসার সম্ভাবনা বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, নির্বাচন যত বেশি বিলম্ব করা হবে, আমরা মনে করি জাতির কাছে আবারও স্বৈরাচার ফিরে আসার সম্ভাবনা তত বেশি বাড়বে। আর এর দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকার ও সংশ্লিষ্টদের উপরেই বর্তাবে।
গুজবের বিষয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপি কখনো প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি, বরং শুরু থেকেই সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে।
বৈঠকে তিনটি প্রধান বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন, বিচারকার্য এবং নির্বাচন সংস্কার নিয়ে তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া এবং বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
বৈঠকের ফলাফল নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এখনই আমাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় আসেনি। যে আলোচনা হয়েছে তা উনারা প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানাবে। তারপরে আমরা প্রতিক্রিয়া জানাতে পারব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, বৈঠকে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং সংস্কারের বিষয়ে তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।
খসরু বলেন, সংস্কারের বিষয়ে আমরা তাদের সঙ্গে একমত হয়েছি। আর সংস্কারগুলো ঐক্যমতের ভিত্তিতেই হবে। আর এটা খুব দ্রুতই বাস্তবায়ন হবে। এখানে কোনো দ্বিমত পোষণ করা হয়নি। নির্বাচনের বিষয়ে এমন কথাও হয়েছে, চাইলে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলেন, আজকে দেশের যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে, তার শেষ হয়ে শান্তি ফিরে আসবে একটি ঘোষণার মাধ্যমেই।
ইএসএস/টিএ/এমজে