ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ চৈত্র ১৪৩২, ১৫ মে ২০২৫, ১৭ জিলকদ ১৪৪৬

রাজনীতি

দুদকেও ছিল টর্চার সেল: রফিকুল আমিন

সিনিয়র রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৫৩, মে ১৪, ২০২৫
দুদকেও ছিল টর্চার সেল: রফিকুল আমিন

ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) একটা টর্চার সেল ছিল এবং সেখানে চোখে কাপড় বেঁধে মুখে গরম পানি ঢেলে অমানবিক নির্যাতন করা হতো। এমন তথ্য দিয়েছেন ডেসটিনি গ্রুপের এমডি ও আমজনগণ পার্টির আহ্বায়ক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আমীন।

তিনি বলেছেন, সবাই জানে দুদক দুর্নীতি দমনের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমি দেখেছি, সেটা ছিল দুর্নীতির আখড়া। সেখানে যা হয় তা কল্পনাতীত।

বুধবার (১৪ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

রফিকুল আমীন বলেন, যখন ডেসটিনি শুরু করি, তখন ফ্যাসিস্ট সরকারের রোশানলে পড়ে যাই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেয়। তারা যে মামলা করেছে সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল না। তবে একটি অনিয়ম তারা বের করে। কারণ আমরা আইন সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। আইনে ৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করা যাবে না, আমরা তার বেশি করেছিলাম। কিন্তু অন্যায় মেনে আবেদন করে সে ঝামেলা মেটানোর পরেও আমাকে দেওয়ানী মামলার পরিবর্তে ফৌজদারি মামলা দেওয়া হয় দুদকের কয়েকজন কর্মকর্তার উৎসাহে। তারা বলেছিলেন, আমার নামে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা করা হবে। আমার সকল কার্যক্রমই মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ তোলা হয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, তারিখ পরিবর্তন করে তার দীর্ঘ কারাবাসের ব্যবস্থা করা হয়। পত্রিকার রিপোর্ট ছাড়া আমার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ ছিল না।  

তিনি বলেন, আমাকে ১৬৪ ধারায় সাক্ষী দিতে বলা হয়েছিল। আমি দেইনি বলে আমার চেয়ারম্যানকে প্রচণ্ড মারধর করে।

দুদককে শয়তানের আখড়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওখানে একটা টর্চার সেল ছিল, সেখানে যা হতো তা কল্পনা করতে পারবেন না। দড়ি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখতো। দুদক তো দুর্নীতি দমন করে। আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, আপনি যদি আমাদের কথা না শোনেন আপনার বউ বাচ্চা ধরে নিয়ে আসবো। আমি তাতে রাজি না হওয়ায় আমার বউকে আসামি করা হয়েছে। আমার বউ এখনো জেলে আছে। আমার দুইটা নাবালক বাচ্চা একা একা বারোটা বছর বড় হয়েছে।  

তিনি বলেন, বিনা অপরাধে কত মানুষ জেল খাটছে। হাসিনার অত্যাচারে যারা বিনাদোষে জেলে গেছেন তারা এখনো বের হতে পারেননি। আমি সবাইকে কথা দিয়ে আসছি, আমি রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি করব, সেখানে আপনাদের কথা বলব।  

তিনি বলেন, আমি ২৩ দিন ছিলাম দুদকে। আমাদের মারা হতো। সাইকোলোজিক্যালি ডাউন করা হয়। আমাদের লোকদের বলা হতো সাক্ষী হবা, নাকি আসামি হবা। তারা বলতেন, আমরা অন্যায় করিনি। বিনিয়োগকারীদের সাক্ষী রাখেনি। সাক্ষী হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এভাবে ২১৯ জন সাক্ষী বানায়। আমি জানতে চাইলে বলে সাক্ষী নিতে সময় লাগবে।  

আমাকে এক সময় প্রস্তাব দেওয়া হয়, বিদেশে চলে যান। আমি বলেছি, আমি যাব না। তারা আবার অফার করে ডেসটিনির সব বন্ধ করে দেন এক সপ্তাহের মধ্যে জামিন দেব। আমি বললাম, বিনিয়োগকারীরা বেকার হয়ে যাবে। এরা সরকারকে ভোট দেবে না। তারা বলেন, সরকার ভোটের চিন্তা করে না।

‘আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, একদিন গণমাধ্যমের সামনে আসব এবং সবার কাছে সেই অন্ধকার, অপকৌশল তুলে ধরব। আজ সেই দিন। আমি মানুষের পাশে দাঁড়াতে রাজনৈতিক দল গঠন করেছি। ’

পার্টির নাম পরিবর্তন সম্পর্কে রফিকুল আমীন বলেন, আমজনতা নাম ছিল শুরুতে, এটি ২০২২ সালে দেওয়া। পরে ৫ আগস্টের পর আমজনতা দল নামে একটি দল এলো। এরপর আমজনতা দলের নেতা তারেক রহমান অনুরোধ করেন দলের নাম পরিবর্তনের জন্য। তিনি আমাকে হুমকি দেন, নাম পরিবর্তন না করলে এমন কোনো কাজ বাদ রাখব না যাতে আপনি বিরক্ত না হোন। তারপর তিনি বলেন, আপসে আপনারা এটা করেন। আমি প্রতিহিংসা না করে তাদের সম্মানে বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি নামকরণ করা হয়।

তিনি বলেন, এই সরকার পরিবেশবান্ধব, রাজনীতি বান্ধব। এ সরকারের সময়ে অনেক রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়েছে। যত বেশি দল তত বেশি মত প্রকাশের সুযোগ তৈরি হয়।  

এখনই সংসদে যাওয়ার মতো লক্ষ্য দেখছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মনে করি। আমি মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করতে এসেছি।

ভবিষ্যতে কোনো জোট করবেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা আমার উচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। আমি একটা ভোট দিতে পারি সেখানে। তিনি বলেন, আপাতত জোটের কোনো চিন্তা নেই।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির আয়োজনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় মিট দ্য রিপোর্টার্সে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন।

পিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।