ঢাকা, বুধবার, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

অধিকাংশ শ্রমজীবীর কাছেই অর্থহীন মে দিবস

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৩২, মে ১, ২০১৯
অধিকাংশ শ্রমজীবীর কাছেই অর্থহীন মে দিবস ইট ভাঙাছেন একজন শ্রমিক/ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: পহেলা মে সকাল থেকেই সরকারি-বেসরকারি অফিস, কলকারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বিপণী বিতান বন্ধ। বাস-ট্রাকসহ পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যেও মে দিবসের আমেজ। র‌্যালি, গণসংগীতানুষ্ঠান ও আলোচনাসভাসহ বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করছেন শ্রমিকেরা। মাইকে কানের পর্দা ফাটানো বক্তব্যে শ্রমিকদের অধিকারের কথা বলা হচ্ছে, তুলে ধরা হচ্ছে মে দিবসের মাহাত্ম্য।

কিন্তু ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মে দিবস পালনকারী এসব শ্রমিক ও নেতাদের খুব কাছেই রয়েছে হাজারো শ্রমজীবী মানুষ, যারা প্রতিদিনের মতো আজও এসেছেন শ্রম বিকোতে। আর ওই শ্রম বিক্রির টাকা দিয়েই তার চুলোয় উঠবে ভাতের হাঁড়ি।

এসব মানুষের কাছে মে দিবস একেবারেই অর্থহীন।  

বুধবার (১ মে) সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে তপ্ত রৌদ্রে কর্মরত অবস্থায় দোঁ যায় নির্মাণশ্রমিক, মাটিকাটা, ইটভাঙা, ধান কাটা, চাতাল শ্রমিক ও রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের।  

পৌর এলাকার কাজিপুর মোড় এলাকায় চারলেন মহাসড়কে খোঁয়া বিছানোর কাজ করছিলেন দিনমজুর হুমায়ুন। মধ্যবয়সী এ শ্রমিক বলেন, কি করবো বাহে, মে দিবস তো বুঝিই। কিন্তু প্যাট তো মাইনছে না। হামরা হেই রাজশাহী থ্যাকে প্যাটের দায়ে কাম করবার আসিচছি, কাম কইরলে ট্যাকা না করইলে নাই।
তার কথায় সায় দেন একই এলাকা থেকে আসা শ্রমিক পলাশ ও মারুফ।  

তবে একই এলাকার শিপন বলেন, হামরা বুলেছিনু আইজ মে দিবস-কাম করমু না। কিন্তু মালিকপক্ষ হামাগোরে ছাইড়লেন না। সক্কাল বেলা ঘুম থেইক্যা ডাইক্যা কামে নিয়্যা আইসলেন সর্দার।  

সরকারি কাজে রাস্তায় খোঁয়া ঠিক করছেন এক শ্রমিকট্রাক থেকে মাটি আনলোড করছিলেন সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের বহুতী গ্রামের আব্দুস সালাম, সোলেমান, নূর হোসেন, আব্দুল ওহাবসহ প্রায় ১০/১২ জন শ্রমিক। মে দিবস সম্পর্কে কথা বলতে চাইলে তারা বলেন, বাবারে, আমরা দিবস-টিবস বুঝি না। দিন কামাই কইরা দিন খাই-ছুটির কোনো অবসর নাই। একদিন কাজ না কইরল্যে সংসারে টানাটানি শুরু হয়।  

দুপুরের দিকে আলী আকবর, বাদশা, রশিদ, লতিফসহ সদর উপজেলার জামুয়া গ্রামের ৮/১০ জন শ্রমিক মাটিকাটার টুকরি ও কোদাল নিয়ে মহাসড়কে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন।

মে দিবস সম্পর্কে জানেন কিনা জানতে চাইলে মজুরেরা বলেন, মে দিবস আমাগোরে জন্যি না। যারা মিলে কাম করে, বাস-ট্রাক চালায় তাগোর জন্য। আমরা মাঠের কামলা, আমাগোরে আবার ছুটি কীসের।  

এসময় আলী আকবর বলেন, মাটি কাটার কাম কইরা তিনশ ট্যাকা পাইছি। এহন বাজার কইরা নিয়্যা বাড়িত যামু।

আজও শ্রম বিকোনোর আশায়জোয়ালভাঙার একটি ভাটায় ইটভাঙার কাজ করছিলেন ষাটোর্ধ্ব আব্দুস ছালাম। তিনি বলেন, ছুটি-বড়লোকদের জইন্য। আমাগোরে একদিন ইট না ভাইঙলে খাবার জুটবে না। আমরা ওইসব ছুটিছাটা চাই না।  

শিয়ালকোলের রিকশাচালক বারিক, ইয়াকুব, আমিনুল, জহুরুলসহ অনেকেই জানান, মে দিবস তাদের জন্য আগেও ছিল না এখনও নেই। প্রতিদিন কাজ করেই খেতে হবে-তাই এসব বিষয় নিয়ে ভাবেন না তারা।  

শহর ছেড়ে একটু দূরে গেলেই এ ধরনের অসংখ্য শ্রমিকদের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আন্তর্জাতিক এ দিবসটির অর্থও বোঝেন না। এদের মধ্যে রয়েছে, চাতাল শ্রমিক, মাটিকাটা শ্রমিক, রিকশাশ্রমিক, ঘর মেরামত শ্রমিক ও কৃষি দিনমজুর। কবে, কেন আর কি কারণে মে দিবসের জন্ম হয়েছিল, জানা নেই এসব শ্রমিকদের। অন্য দিনের মতোই এসব শ্রমিকরা নিজেদের কর্মস্থলে যান। দিনভর শ্রম বিক্রি করে নির্ধারিত মূল্য নিয়ে ফিরে যান নিজ নিজ বাড়ি। মে দিবস সম্পর্কে এসব শ্রমিকদের ধারণা, সরকারি-বেসরকারি চাকরীজীবী, কলকারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বাস-ট্রাক শ্রমিকরাই দিবসটি পালন করবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা বাসদের সমন্বয়ক ও শ্রম আন্দোলনের নেতা নব কুমার কর্মকার এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, মালিক ও শাসকশ্রেণীর মানুষগুলো শ্রমিকদের মে দিবসের ইতিহাস ভুলিয়ে রাখতে চায়। আর মে দিবসের তাৎপর্য যদি শ্রমিকরা ভুলে যায়, তবে তাদের সারাজীবন মালিকদের পদানত থাকতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মে -১, ২০১৯
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।