কিন্তু ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মে দিবস পালনকারী এসব শ্রমিক ও নেতাদের খুব কাছেই রয়েছে হাজারো শ্রমজীবী মানুষ, যারা প্রতিদিনের মতো আজও এসেছেন শ্রম বিকোতে। আর ওই শ্রম বিক্রির টাকা দিয়েই তার চুলোয় উঠবে ভাতের হাঁড়ি।
বুধবার (১ মে) সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে তপ্ত রৌদ্রে কর্মরত অবস্থায় দোঁ যায় নির্মাণশ্রমিক, মাটিকাটা, ইটভাঙা, ধান কাটা, চাতাল শ্রমিক ও রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের।
পৌর এলাকার কাজিপুর মোড় এলাকায় চারলেন মহাসড়কে খোঁয়া বিছানোর কাজ করছিলেন দিনমজুর হুমায়ুন। মধ্যবয়সী এ শ্রমিক বলেন, কি করবো বাহে, মে দিবস তো বুঝিই। কিন্তু প্যাট তো মাইনছে না। হামরা হেই রাজশাহী থ্যাকে প্যাটের দায়ে কাম করবার আসিচছি, কাম কইরলে ট্যাকা না করইলে নাই।
তার কথায় সায় দেন একই এলাকা থেকে আসা শ্রমিক পলাশ ও মারুফ।
তবে একই এলাকার শিপন বলেন, হামরা বুলেছিনু আইজ মে দিবস-কাম করমু না। কিন্তু মালিকপক্ষ হামাগোরে ছাইড়লেন না। সক্কাল বেলা ঘুম থেইক্যা ডাইক্যা কামে নিয়্যা আইসলেন সর্দার।
ট্রাক থেকে মাটি আনলোড করছিলেন সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের বহুতী গ্রামের আব্দুস সালাম, সোলেমান, নূর হোসেন, আব্দুল ওহাবসহ প্রায় ১০/১২ জন শ্রমিক। মে দিবস সম্পর্কে কথা বলতে চাইলে তারা বলেন, বাবারে, আমরা দিবস-টিবস বুঝি না। দিন কামাই কইরা দিন খাই-ছুটির কোনো অবসর নাই। একদিন কাজ না কইরল্যে সংসারে টানাটানি শুরু হয়।
দুপুরের দিকে আলী আকবর, বাদশা, রশিদ, লতিফসহ সদর উপজেলার জামুয়া গ্রামের ৮/১০ জন শ্রমিক মাটিকাটার টুকরি ও কোদাল নিয়ে মহাসড়কে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন।
মে দিবস সম্পর্কে জানেন কিনা জানতে চাইলে মজুরেরা বলেন, মে দিবস আমাগোরে জন্যি না। যারা মিলে কাম করে, বাস-ট্রাক চালায় তাগোর জন্য। আমরা মাঠের কামলা, আমাগোরে আবার ছুটি কীসের।
এসময় আলী আকবর বলেন, মাটি কাটার কাম কইরা তিনশ ট্যাকা পাইছি। এহন বাজার কইরা নিয়্যা বাড়িত যামু।
জোয়ালভাঙার একটি ভাটায় ইটভাঙার কাজ করছিলেন ষাটোর্ধ্ব আব্দুস ছালাম। তিনি বলেন, ছুটি-বড়লোকদের জইন্য। আমাগোরে একদিন ইট না ভাইঙলে খাবার জুটবে না। আমরা ওইসব ছুটিছাটা চাই না।
শিয়ালকোলের রিকশাচালক বারিক, ইয়াকুব, আমিনুল, জহুরুলসহ অনেকেই জানান, মে দিবস তাদের জন্য আগেও ছিল না এখনও নেই। প্রতিদিন কাজ করেই খেতে হবে-তাই এসব বিষয় নিয়ে ভাবেন না তারা।
শহর ছেড়ে একটু দূরে গেলেই এ ধরনের অসংখ্য শ্রমিকদের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আন্তর্জাতিক এ দিবসটির অর্থও বোঝেন না। এদের মধ্যে রয়েছে, চাতাল শ্রমিক, মাটিকাটা শ্রমিক, রিকশাশ্রমিক, ঘর মেরামত শ্রমিক ও কৃষি দিনমজুর। কবে, কেন আর কি কারণে মে দিবসের জন্ম হয়েছিল, জানা নেই এসব শ্রমিকদের। অন্য দিনের মতোই এসব শ্রমিকরা নিজেদের কর্মস্থলে যান। দিনভর শ্রম বিক্রি করে নির্ধারিত মূল্য নিয়ে ফিরে যান নিজ নিজ বাড়ি। মে দিবস সম্পর্কে এসব শ্রমিকদের ধারণা, সরকারি-বেসরকারি চাকরীজীবী, কলকারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বাস-ট্রাক শ্রমিকরাই দিবসটি পালন করবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা বাসদের সমন্বয়ক ও শ্রম আন্দোলনের নেতা নব কুমার কর্মকার এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, মালিক ও শাসকশ্রেণীর মানুষগুলো শ্রমিকদের মে দিবসের ইতিহাস ভুলিয়ে রাখতে চায়। আর মে দিবসের তাৎপর্য যদি শ্রমিকরা ভুলে যায়, তবে তাদের সারাজীবন মালিকদের পদানত থাকতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মে -১, ২০১৯
এএ