মে দিবসের দিনেও কাজ করতে হয় ইটভাটা শ্রমিকদের/ছবি: বাংলানিউজ
মুন্সীগঞ্জ: শুনছি শ্রমিক দিবস আছে, কিন্তু ওইদিন আমাগো কাজ চলে। শ্রমিক গো আবার কিসের চাওয়া-পাওয়া আর স্বপ্ন। কেনা গোলামের মতো আমাগো জীবন। এ গরমের মধ্যে চুল্লি আর রোদে টিনের তাপ সহ্য কইরা বাইচা আছি। ইটভাটার শ্রমিক গো জীবন..., শ্রমের কোনো মূল্য নাই।
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের বালুরচর এলাকার শ্রমিক মমিন হোসেন হৃদয় (৩৩) এমনটাই বলছিলেন। ৮ বছর আগে কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে জীবিকার তাগিদে আসেন এখানে।
সিরাজদিখানের ইটভাটাগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের তৈরি বেড়া চারপাশে দিয়ে ঘর বানানো। টিনের তৈরি কিছু ঘর আছে। চুল্লি তাপ এবং রোদে প্রচণ্ড গরম হয়ে পড়ে এসব। বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। ভোর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ চলে। দুপুরে খাবারের বিরতি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই ব্যস্ততা। শিশুদের বাবা-মা মালিকদের থেকে ১০-২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এ টাকা নেওয়ার কারণে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে শিশুরা। বর্তমানে কাঁচা ইট চুল্লিতে প্রবেশ করিয়ে পরিপূর্ণ করতে শ্রমিকরা কাজ করছেন।
ভৈরব থেকে আসা আবুল কাসেম বাংলানিউজকে জানান, জমির টাকা পরিশোধ করতে হবে। ইটভাটার মালিক থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে দুই ছেলে ও এক মেয়ে কাজ করছি। দুই ছেলে প্রতিদিন ৬০টি ইট বহন করে। ছেলে ও মেয়ের কষ্ট দেখতে খুব খারাপ লাগে। সারাদিন কষ্ট করে যে টাকা পাওয়া যায় সেটি খুবই কম।
কাসেমের ছোট ছেলে নাইয়ুম বাংলানিউজকে জানান, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা জোর করে নিয়ে আসে। হাতে অনেক ব্যাথা হয় ইট টানতে। ঘুমানোর ঘরে অনেক মশা। রাতে হাত, পা ও ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যাথা হলে মা মালিশ করে দেয়, না হলে ঘুম আসেনা।
হবিগঞ্জ থেকে মাদ্রাসায় পড়ুয়া মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে আসা রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন ইট টেনে ৩৫০ টাকা আসে। কার্তিক মাসে এসে জ্যৈষ্ঠ মাসের ২০ তারিখের মধ্যে চলে যাই। ৮ মাসে ২০ হাজার টাকা ইট কলে কাজ করে পাওয়া যায়। মালিক কোনো খোঁজখবর নেন না। নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, স্বাস্থ্য সেবা মেলেনা। সরকারের কাছে আমাদের কোনো চাহিদা, চাওয়া-পাওয়া নেই। শুধু শ্রমিক দিবসে উপলক্ষে শ্রমের মূল্য বৃদ্ধি করার দানি জানাই।
স্থানীয় ইট-ভাটার মালিক বাংলানিউজকে নাজমুল হাসান বাংলানিউজকে জানান, আমরাও চাই শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়ে দিতে। প্রতিবছরই কয়লার দাম বাড়ছে, ভ্যাট বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু ইটের দাম একই রকম আছে। কাঁচামাল ও ভ্যাট কমানো হলে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা যেতো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৯
এসএইচ
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।