ঢাকা, বুধবার, ১২ ভাদ্র ১৪৩২, ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

৬ বছরেও কান্না থামেনি পা হারানো রেবেকার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:৫৯, এপ্রিল ২৪, ২০১৯
৬ বছরেও কান্না থামেনি পা হারানো রেবেকার দুঃস্বপ্নে বেঁচে আছেন রানা প্লাজায় পা হারানো রেবেকা। ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: ঢাকার সাভারে ভয়াবহ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও কান্না থামেনি দুই পা হারানো রেবেকা খাতুনের।

পা হারিয়ে নিজে প্রাণে বাঁচলেও ইতিহাসের ভয়াবহ এই শিল্প দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন রত্নগর্ভ মা, ফুফু ও দাদিকে । দেশের মানুষের কাছে সেই ধসের স্মৃতিও বিলীন হতে শুরু করলেও রেবেকার জীবন থেকে হারিয়ে যায়নি সেই দুর্বিষহ স্মৃতি।

অন্য দু’চারটির মতো নয় সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা এটি। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। গার্মেন্টস খাতের ইতিহাসে এখন এক কালো নাম রানা প্লাজা । ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১১৭৫ জন নিরীহ মানুষ।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বারাই হাট এলাকার বাসিন্দা রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে দুই পা হারানো রেবেকা খাতুন।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বারাই হাট এলাকার চেয়ারম্যান পাড়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দু’পা হারানো রেবেকা খাতুন তার দু’বছরের কন্যা সন্তানকে পাশে রেখে অনেক কষ্ট করে চুলায় রান্না করছেন।

রেবেকা বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আহত শ্রমিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিদিন হাসপাতালে ছিলাম। পুরোপুরি সুস্থ্ হতে প্রায় ১০ মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। দুই পায়ে মোট আটবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। ওই দুর্ঘটনায় তিনি তার মা চান বানু ও ফুফু ও দাদিকে হারিয়েছেন।

কান্না বিজড়িত কন্ঠে রেবেকা খাতুন বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনার ৬ বছর হয়ে গেলেও এখনো দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করে ফেরেন তাকে। রানা প্লাজা ধসের দুই বছর আগে পছন্দ করে মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক যুবককে বিয়ে করেন তিনি। এরপর রানা প্লাজা ধসে মোস্তাফিজুর আর রেবেকার সুখের সংসার লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। রানা প্লাজার ইট-পাথরের স্তুপে হারিয়ে যান মা চান বানু বেগম। মারা যান দাদি ও ফুফু।

রেবেকা খাতুন সেই দুঃসহ স্মৃতিচারণ করে বলেন, ঘটনার পর তার জ্ঞান ছিলো না। দু’দিন পর জ্ঞান ফিরে এলে সে দেখতে পায় তার পায়ের ওপর সিমেন্টের খুঁটির নিচে চাপা পড়ে আছেন।   অন্ধকার এক জায়গায় পড়েছিলেন তিনি। তখন চিৎকার করতে থাকলে কয়েকজন উদ্ধারকর্মী কাছে আসেন। কিন্তু বোঝা তার শরীরে চাপা থাকায় তখনও তারা তাকে উদ্ধার করতে পারেননি। এ সময় রেবেকা উদ্ধার কর্মীদের তার স্বামীর মোবাইলফোন নম্বর দেন। পরে তার স্বামী এসে উদ্ধারকর্মীদের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করেন। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ১০ মাস রেবেকাকে চিকিৎসা নিতে হয়। বাম পা কোমর পর্যন্ত ও ডান পা গোড়ালি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে তার।

রেবেকা খাতুন জানান, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন। সেটি স্থায়ী আমানত হিসাবে ব্যাংকে আছে। সেই স্থায়ী আমানতের টাকা দিয়ে কোনো মতে তাদের সংসার চলে। তার দেখাভালে জন্য তার স্বামী বাহিরে কাজ করতে পারে না।

তিনি বলেন, আমার স্বামী আমার প্রসাব পায়খানা পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে ঘর সংসারের সব কাজ করেন। এখন আর আমাদের কেউ খোঁজ নিতে আসে না।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৯
টিএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।