ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

পেট্রাপোলে অব্যবস্থাপনায় ভারত যাত্রায় দুর্ভোগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:২৬, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
পেট্রাপোলে অব্যবস্থাপনায় ভারত যাত্রায় দুর্ভোগ বৃষ্টিতে ভিজেও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা-ছবি-বাংলানিউজ

বেনাপোল (যশোর): বৈধপথে ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে অব্যবস্থাপনার কারণে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়ছেন বাংলাদেশিরা। শুধু বাংলাদেশি নয় ভোগান্তির কবলে পড়ছেন ভারতীয় নাগরিকরাও। এমনকি মাঝে মধ্যে নির্যাতনের অভিযোগও উঠছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন ঘটনা ঘটলেও যেন দায় নেই সংশিষ্ট বিভাগের।

যাত্রীরা বলছেন, বৈধপথে পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে এরকম দুর্ভোগ মেনে নেওয়া যায় না। এক্ষেত্রে সরকারের সংশিষ্ট বিভাগের নজর দেওয়া দরকার।

আর বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা বার বার অভিযোগ জানিয়ে আসছেন।

জানা গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমণে এ পথে দেশি-বিদেশি পাসপোর্ট যাত্রীদের যাতায়াত দেশের অন্য ইমিগ্রেশনের চাইতে বেশি। এছাড়া পার্শ্ববর্তী এই দেশটির সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশিদের আত্মীয়তার সম্পর্ক। ফলে দিন দিন এ পথে যাতায়াত বাড়ছে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত যাত্রী যাতায়াত করেন।  

ভিসা নিতে ভারতীয় হাইকমিশন পাসপোর্ট প্রতি ৭শ’ টাকা ভ্রমণ কর নেয়। আর বাংলাদেশ সরকার নিচ্ছে ৫৪২ টাকা। এছাড়া ভিসার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে আরও খরচ হয় প্রায় ২ হাজার টাকা। যাত্রী সুবিধার্থে বাংলাদেশ সরকার অনেক আগেই এপার সীমান্তে আন্তর্জাতিক কাস্টমস-ইমিগ্রেশন ভবন, যাত্রী টার্মিনাল ও বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্থাপনার উন্নয়ন করেছে। বাড়ানো হয়েছে কাস্টমস ও পুলিশের জনবল। কিন্তু ভারত অংশে যাত্রী সেবায় এসবের কিছু নেই। এতে ভারত যাত্রায় মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশিদের।

প্রখর রোদে, বৃষ্টিতে ভিজেও লাইনে দাঁড়াতে হয় যাত্রীদের। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের কাজ শেষ করে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে ঢোকার অপেক্ষায় পেট্রাপোল চেকপোস্টে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয় যাত্রীদের।

কিন্তু ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা অনেক সময় তাদের সেখানে ভিড় করতে নিষেধ করে বাংলাদেশ অংশে গিয়ে লাইনে দাঁড়াতে বলেন। সম্প্রতি মহাসড়কের উপর ঝুঁকি নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে যাত্রীদের।

কথা হয় চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারত যাত্রায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আশরাফের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। বিকাল ৫টায় কলকাতায় ডাক্তারের সিরিয়াল। এখনও ওপারে ঢুকতে পারিনি। লাইন ভাঙলে আবার তিন ঘণ্টা পিছিয়ে যাবো। ডাক্তার আর দেখানো হবে না। তাই বাধ্য হয়ে বৃষ্টির মধ্যেও লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।

ভুক্তভোগী এক ভারতীয় যাত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। সব সমস্যা পেট্রাপোলে। একজন ইমিগ্রেশন অফিসার এতগুলো লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের ধীরে ধীরে পাসপোর্ট দেখছেন। রোদ, বৃষ্টিতে ভিজে মানুষকে কষ্ট করতে হচ্ছে। এভাবে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ানোর মতো ভোগান্তি আর নেই।  

সোমবার (৯ এপ্রিল) সকালে পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে ভারতে প্রবেশের পর ভারতীয় ইমিগ্রেশনের ভেতর মোবাইলে কথা বলায় নেত্রকোনার কেন্ডুয়া থানার খালিশপুর গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে মিনহাজ আরাফাতকে মারধর করে সাদা পোশাকধারী ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরে তাকে ভারতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়।

সাতক্ষীরার আলীপুর পাসপোতা গ্রামের গহর আলীর ছেলে নূর আলী গত মাসে ট্যুরিস্ট ভিসায় ভারতে গিয়েছিলেন। চলতি মাসের ১১ এপ্রিল অবারও ভারতে যাওয়ার জন্য পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে গেলে কর্তৃপক্ষ তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে পাসপোর্টে এন্টি রিফিউজ সিল মেরে ফেরত পাঠিয়ে দেন।

 কড়া রোদে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা-ছবি-বাংলানিউজমানিচেঞ্জার ব্যবসায়ী আবুল বাশার বলেন, ভারতীয় হাইকমিশন আগ্রহী যাত্রীদের সার্বিক তথ্য যাচাই-বাছাই করে ভিসা দেয়। তারপরও সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়া ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের এমন আচরণ দুঃখজনক। এছাড়া মাল্টিপল ভিসা দিলেও মাসে একাধিকবার যাতায়াত করতে বাধা দিচ্ছে তারা। প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের কাছে এমন আচরণ আশা করেন না বলে জানান তিনি।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) আমিনুল ইসলাম বলেন, তারা যখন ওপারে ভারতীয় কাস্টমস-ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সব সময় যাত্রী দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্বস্ত করেছেন যাত্রী সুবিধায় অবকাঠামোগত উন্নয়নে তারা দ্রুত কাজ করবেন।

বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ অংশে যাত্রীদের তারা দ্রুত পাসপোর্টের কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। এমনকি ইমিগ্রেশন অফিস সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা রাখার কথা থাকলেও তারা অনেক সময় আটকে থাকা যাত্রীদের জন্য রাত ১০টা পর্যন্তও খোলা রেখে কার্যক্রম সচল রাখছেন। ওপারের সমস্যা নিয়ে তারা ভারতীয় ইমিগ্রেশনের সঙ্গেও একাধিকবার কথা বলেছেন।

বাংলাদশে সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, ১৩ এপ্রিল, ২০১৮
এজেডএইচ/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।