ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

কেন হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬:৪৩, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
কেন হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ! পুতুল নাচ। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: পহেলা বৈশাখে গ্রামীণ জনপদে যে সব মেলা হতো সে সব মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল পুতুল নাচ। এছাড়া সারা বিশ্বে পুতুল নাচ লোকনাট্যের অন্যতম প্রতীক। আমাদের এ উপমহাদেশে লোকনাট্যের এ মাধ্যম পতুল নাচের জন্ম বা প্রচলন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বিপিন পালের হাত ধরে।

গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় ও জৌলুসপূর্ণ বিনোদনের এ মাধ্যম আজ নানা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। আগের মতো পুতুল নাচে জৌলুস না থাকায় এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।

ফলে খুব দ্রুত এ লোকনাট্যের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

উইকিপিডিয়া সূত্রে জানা যায়, লোকনাট্যের একটি প্রাচীন মাধ্যম পুতুল নাচ। বৈশাখের মতো বিভিন্ন গ্রামীণ উৎসবে পুতুল নাচের ব্যাপক চাহিদা। সামাজিক বিভিন্ন বিষয়, পালাগান, পৌরাণিক কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হয় পুতুল নাচের মাধ্যমে।

জনশ্রুতি রয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিপিন পাল ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম পুতুল নাচের প্রচলন করেন। কালক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানে। পরে এ শিল্পের হাল ধরেন জেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের গিরীশ আচার্য, তারু মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডা এলাকার ধন মিয়া, কালু মিয়া, রাজ হোসেন ও পৌর শহরের কাজীপাড়া এলাকার শরীফ মালদার। পুতুল নাচ।  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমকিন্তু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা গেলেও এখন শিল্পী সংকট দেখা দিয়েছে। অন্য পেশায় আর্থিকভাবে লাভবান হন বলে শিল্পীরা এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

পুতুল নাচের শিল্পী খেলু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমি যখন স্কুলে পড়তাম, তখন থেকে বাবার সঙ্গে মেলাতে আসা-যাওয়া করতাম। সে সময় থেকে এ খেলা দেখতে দেখতে নিজের মধ্যে শেখার একটা আগ্রহ তৈরি হয়। বাবা হোসেন আলী মারা যাওয়ার পর আমি এ পেশার হাল ধরি।

তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে পুতুল নাচ দেখিয়ে মানুষের মধ্যে আনন্দ দিতাম। বিভিন্ন প্রোগ্রাম থাকতো এবং অনেক প্রজেক্টের কাজও করতাম। এখন আর তেমন কাজ পাই না। দলের লোকজন নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। মাঝে মধ্যে যে কয়টা প্রোগ্রাম পাই, তার টাকা দিয়ে তেমন পোষায় না।

পুতুল নাচকে টিকিয়ে রাখতে পরবর্তী প্রজন্ম আসতে চাইবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের এ কাজটা এখন শিখাতে চাই না। কারণ আমাদের নিজেদের এখন দূর অবস্থা। যার কারণে ছেলে-মেয়েদের অন্য কাজের দিকে মনোযোগী হতে হচ্ছে। দিন দিন এ খেলাটি বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে।

এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারে সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

বাণী বিণা দলের মাস্টার কবির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ৩০ বছর ধরে পুতুল নাচের মাধ্যমে নাটক এবং বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান করে আসছি। আগে প্রদর্শনী করে ভালো টাকা রোজগার করা যেত। এখন প্রোগ্রাম পাই না। বাধ্য হয়ে অন্য কাজ করতে হচ্ছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, বছরে ছয়/সাত মাস আমাদের প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করে দিলে তাহলে আমরা পরিবার নিয়ে চলতে পারবো।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পুতুল নাচ এক সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অংশ ছিলো এবং সারাদেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুতুল নাচকে গুরুত্ব দেওয়া হতো। এমন কি পুতুল নাচে যারা প্রয়াত শিল্পী ছিলেন তারা বিদেশে গিয়েও এ খেলার প্রদর্শনী করেছেন।

তিনি বলেন, কিন্তু কালের বিবর্তনে পুতুল নাচের শিল্পীরা অনেকটা পর্দার অন্তরালে চলে যাচ্ছেন। অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। কারণ পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে না। তাই আগামী দিনে জেলা শিল্পকলা একাডেমি পুতুল নাচের বিকাশে এবং শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

পুতুল নাচের পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ে কথা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলামের সঙ্গে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা এবং জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এ শিল্পে যারা সম্পৃক্ত আছেন তাদের একটা তালিকা তৈরি করবেন। পরে এটি আমরা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠাবো।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।