মঙ্গলবার (৩ এপ্রিল) রাতে শহরের তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকার একটি নির্মাণাধীন বাড়ির ঘরের মেঝে খুঁড়ে মরদেহ উদ্ধারের পর বুধবার বেলা ১২টায় র্যাব-১৩ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
তিনি জানান, বাবু সোনা নিখোঁজের পর শনিবার কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দীপা জানিয়েছেন, মূলত পরকীয়া প্রেম, পারিবারিক কলহ, সন্দেহ ও অশান্তি থেকেই স্বামী বাবু সোনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। হত্যার পরিকল্পনা চলতে থাকে দুই মাস আগে থেকে। আর এ হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেন একই স্কুলের শিক্ষক ও তার প্রেমিক কামরুল ইসলাম।
দীপার স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে র্যাব মহাপরিচালক আরও জানান, হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবার পর শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে বাবু সোনার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান কামরুল। সকাল ৯টার দিকে তিনি একটি ভ্যান নিয়ে আসেন। মরদেহ গুমের উদ্দেশ্যে নিহতের স্ত্রী দীপা আলমারি পরিবর্তনের কথা বলে কামরুলের সহায়তায় বাবু সোনার মরদেহ আলমারিতে ভরেন। পরে তিন ব্যক্তির সহায়তায় ওই মরদেহ ভ্যানে তুলে তাজহাট মোল্লাপাড়ার নির্মাণাধীন ওই বাড়ির মেঝেতে পুঁতে রাখা হয়। ভ্যানে তোলার কাজে সহায়তাকারী তিন ব্যক্তিকে কামরুল মাস্টার তার সঙ্গে নিয়ে আসেন। পরে তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী মোল্লাপাড়ার রবিউল ইসলামের ছেলে সবুজ ইসলাম (১৭) ও রফিকুল ইসলামের ছেলে রোকনুজ্জামান (১৭) গর্তের মাটি ভরাটে সহায়তা করে।
ওই দুই শিক্ষার্থীর স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে র্যাবের মহাপরিচালক জানান, ২৬ মার্চ শিক্ষক কামরুল ইসলামের নির্দেশে ৩০০ টাকার বিনিময়ে তারা গর্ত খুঁড়ে রাখে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বালু দিয়ে গর্ত ঢেকে রাখে তারা। কামরুল তাদের শিক্ষক হওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে তার আদেশ পালন করেছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান। দীপা ও দুই শিক্ষার্থীকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করার কথাও জানান র্যাব মহাপরিচালক।
এদিকে, সোমবার কামরুল ও মতিয়ারকে আটক করা হলেও তখন এ বিষয়ে কিছু জানায়নি পুলিশ। পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদের আটকের কথা স্বীকার করেন কোতোয়ালী থানার ওসি বাবুল মিঞা।
উল্লেখ্য, নিখোঁজ হওয়ার ৫দিন পর মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে নিজ বাড়ি তাজহাট বাবুপাড়া থেকে আধা কিলোমিটার দূরে তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকার শিক্ষক কামরুল ইসলামের ঢাকায় বসবাসরত বড় ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাড়ির মাটির নিচ থেকে বাবু সোনার মরদেহ উদ্ধার করে র্যাব। পরে মরদেহটি সনাক্ত করার জন্য বাবু সোনার ছোটভাই সুশান্ত ভৌমিক সুবল ও স্ত্রী দীপাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা গিয়ে বাবু সোনার মরদেহ সনাক্ত করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কামরুল ইসলামের পৈত্রিক নিবাস হচ্ছে তাজহাট মোল্লাপাড়া। তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে শহরের রাধাবল্লভ এলাকায় বসবাস করলেও মোল্লাপাড়ার বাড়িতেও নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সেখানে তার জমিজমা ও বাগান রয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই বাগানের মধ্যে দুটি বিশাল আকারের গর্ত খোঁড়া রয়েছে।
প্রতিবেশীরা জানান, একমসাস আগে ওই গর্ত দুটি খুঁড়েছেন তিনি। তবে কী কারণে তা খুঁড়েছেন তা কেউ বলতে পারেন না। গত শুক্রবার সকাল থেকে নিখোঁজ ছিলেন বাবু সোনা। ওইদিন তার স্ত্রী বলেছিলেন, বাবু সোনা সকাল ৬টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছেন। কোথায় গিয়েছেন সে বিষয়ে বাড়িতে কাউকে নাকি কিছু বলে যাননি।
এদিকে, দীপা ভৌমিকের এমন বক্তব্যের পর মঙ্গলবার তারই স্বীকারোক্তিতে মরদেহ উদ্ধার হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। অ্যাড. রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা ছিলেন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও এবং মাজারের খাদেম রহমত আলীর চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী ছিলেন।
এছাড়াও রংপুর আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সহ-সাধারণ সম্পাদক, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রংপুর বিভাগের ট্রাস্ট্রি, পূজা উদযাপন পরিষদের রংপুর জেলার সভাপতি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া আরো বেশকিছু সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৮
জেএম
** পরকীয়ার বলি আইনজীবী রথীশ