ফরেনসিক প্রতিবেদনে এসব আঘাতের চিহ্ন প্রতিয়মান হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ একাধিক কর্মকর্তা।
ফরেনসিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রোকেয়া ও তার ছেলেকে গলা কেটে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
পুলিশের ধারণা, পেশাদার খুনিরা ঠাণ্ড মাথায় খুন করেছে মা-ছেলেকে। একাধিক খুনি অনেক সময় নিয়ে তাদের খুন করেছে।
ফরেনসিক প্রতিবেদনে উঠে আসে রোকেয়ার শরীরে ৭৬টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন। এরমধ্যে মাথার পেছনে কাটা জখম, ডান চোখের পাশে ছোট কাটা, গলার ডান পাশে গভীর ছিদ্র, গলার মাঝখানে ছোট ছোট কাটা, পেটে ছোট-বড় ২১টি ছুরিকাঘাত, পিঠে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে ৩৫টি, পিঠের নিচে ১১টি, বাম উরুতে ৩টি, বাম হাতের কনুইয়ের নিচে ও হাতের তালুতে ১টি করে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হত্যার আগে বা পরে রোকেয়া ধর্ষণের শিকার হয়েছে- ধারণা পুলিশের। তবে এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিসেরা প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের পদস্থ ওই কর্মকর্তা।
এদিকে, মরদেহ উদ্ধারকালে রোকেয়ার ছেলে রোকনের মুখে বালিশ চাপা দেওয়া ছিল। সে কারণে তাকে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা করা হতে পারে-পুলিশ এমনটি ধারণা করলেও ময়নাতদন্তে তার দেহে ৩২টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন- রোকনের নাক-মুখে রক্ত লাগানো ছিল। বালিশ ছিল মুখের ওপর। গলার ডান ও বাম পাশে কাটা রয়েছে। বুকের বাম পাশে ৪টি ছুরিকাঘাত, ডান পাশে ১টি, পেটে ছোট-বড় ১৫টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন মিলে, পিঠে ৩টি, বাম হাতে ৮টি এবং ডান হাতের কনুইয়ের নিচে ৮টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।
এছাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা ছোট শিশু রাইসার (৫) গলার ছাপও নেওয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর অপরাধ তদন্ত বিভাগ ‘সিআইডি’, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও র্যাবের টিম আলামত উদ্ধার করেছে। এ যাবত আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে-জানান পুলিশের দায়িত্বশীলরা।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুহম্মদ আব্দুল ওয়াহাব বাংলানিউজকে বলেন, মা-ছেলেকে নৃশংসভাবে গলা কেটে, ছুরিকাঘাত ও খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে আলামত বলে দেয় একাধিক লোক এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এছাড়া ওই নারী ধর্ষণ হয়েছেন কি-না, এটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।
সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌসুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘নৃশংস এ দুই হত্যাকাণ্ডে আসামিদের ধরতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশাকরি খুব শিগগিরই তাদের গ্রেফতারে সক্ষম হবো।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) হুসনে আরা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, উদ্ধার হওয়া শিশুটি পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রয়েছে। শিশুটি মানসিকভাবে এখনো অসুস্থ, ভয় পাচ্ছে। যে কারণে তার ২২ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া ঘটনার পর থেকে আসামিদের গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন বলেন তিনি।
রোববার (১ এপ্রিল) বিকেলে নগরীর মিরাবাজার খাঁরপাড়া ‘মিতালী ১৫/জে’ বাসার নিচতলা থেকে রোকেয়া বেগম ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম রোকনের মরদেহ এবং মেয়ে রাইসাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। নিহত রোকেয়া বেগম সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর কলকলি গ্রামের হেলাল মিয়ার স্ত্রী। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় বছর খানেক ধরে ওই বাসায় দুই সন্তানকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন রোকেয়া।
হত্যার ঘটনায় রোববার মধ্যরাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা (নং-০২(৪)১৮) দায়ের করেন নিহত রোকেয়া বেগমের ভাই জাকির হোসেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পরদিন দুপুরে নিহত রোকেয়া ও তার ছেলের ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিন সন্ধ্যায় নগরীর মানিকপীর (র.) মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৮
এনইউ/জিপি