ব্রহ্মপুত্রের গতি ধারায় এক সময়ের স্রোতস্বিনী সেই বংশাই নদ দখলের কারণে দিনদিন সংকুচিত হয়ে ছোট নালায় পরিণত হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে দখল করে বাসা-বাড়ি নির্মাণ করার ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে নদটি।
স্থানীয়রা জানান, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদীর দুই তীর দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। গোলাবাড়ী ব্রিজ থেকে শুরু করে দামপাড়া গ্রামের বাকে বংশাইয়ের দুই পাড় দখলের দৃশ্য কারো চোখ এড়ায় না। বিশেষ করে কাইতকাই, হাসপাতাল গেটের সামনে, মধুপুর বাসস্ট্যান্ড ব্রিজ থেকে হাটখোলা, বোয়ালী গ্রামের সীমানা এলাকা, দামাপাড়া পর্যন্ত বংশাইয়ের প্রস্থ উদ্বেগজনক।
জানা যায়, এক সময় বংশাইয়ের জলে বনের পশু-পাখি তৃষ্ণা মেটাতো। দুই/তিন দশক আগে এ নদ দিয়ে চলতো পাল তোলা নৌকা। ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে নৌকায় মানুষ যাওয়া আসা করতো। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে মধুপুরে পিকনিকেও আসত নৌকায় করে। এসব এখন শুধুই ইতিহাস।
এ বিষয়ে একটি সেমিনারে জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফি উদ্দিন মনি জানান, বংশাইয়ের সীমারেখা সবাই জানে। তবু চোখের সামনে নদটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কারো কিছু বলার নেই। বংশাই নদটি উদ্ধারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প না থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টাঙ্গাইল জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ বাংলানিউজকে জানান, নদ-নদী দখল রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের করণীয় কিছু নেই। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের এখতিয়ারভুক্ত।
টিআইবি’র সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) মধুপুর শাখার সভাপতি ডা. মীর ফরহাদুল আলম মনি বাংলানিউজকে জানান, বংশাই নদ হলো মধুপুরের ফুসফুস। নিজেদের স্বার্থে এ নদটি টিকিয়ে রাখাতে হবে।
মধুপুর পৌরসভার মেয়র মাসুদ পারভেজ বাংলানিউজকে জানান, শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও পথচারীদের হাঁটার জন্য বংশাইয়ের দুই তীর দিয়ে সড়ক নির্মাণ করতে পারলে মেয়র হিসেবে একটি স্বপ্নের সফল পরিণতি হবে।
পরিবেশ উন্নয়ন সংগঠন ‘বেলা’র টাঙ্গাইলের সিনিয়র গবেষক সোমনাথ লাহেড়ী বাংলানিউজকে জানান, মধুপুরের বংশাই একটি ঐতিহ্যবাহী নদ। ভরাটের কারণে জলজ প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। আইন ও উচ্চ আদালতের ২০১১ সালের এক আদেশ মতে নদী জলমহাল দখল বেআইনি। ফৌজদারি ধারায় শাস্তিযোগ্য। তিনি বংশাই দখল রোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, ইতোমধ্যে উপজেলা ভূমি অফিসকে নদটির দুই পাড়ের দখল চিহ্নিত করে দখলদারদের তালিকা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দখল এলাকা ও দখলদারদের বিষয়ে পরে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৮
এনটি