পাবনার ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর ও ফরিদপুর উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম চলছে নৌকায়।
জাতীয়
পাবনার বিল অঞ্চলে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও কৃষি সেবায় নৌকা

পাবনা: নৌকায় চলছে স্কুল, মিলছে স্বাস্থ্য সেবা আর প্রয়োজনীয় কৃষি পরামর্শও। নৌকায় করে পাবনার তিন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ও বিল অঞ্চলে দরিদ্র মানুষের দোরগোড়ায় বিনামূল্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি সেবা পৌঁছে দিচ্ছে সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
তিনটি নৌকা দিয়ে প্রতিটি ইউনিয়নে সপ্তাহে একদিন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ও তিনটি দিয়ে কৃষি সেবা দেওয়া হচ্ছে। বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও ৩৬ ধরনের ওষুধ দেওয়া এখান থেকে। সপ্তাহে একদিন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রতিদিন একেকটি নৌকায় তিনজন করে স্বাস্থ্য সহকারী চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন।
এসব নৌকায় প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন ৭০ নারী শিক্ষক। প্রতিটি নৌকায় রয়েছে একটি করে কম্পিউটার আর শিক্ষা সহায়ক লাইব্রেরি। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে এই ভাসমান নৌকার কার্যক্রম শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। প্রতিটি নৌকায় থাকেন তিনজন করে শিক্ষক, একজন করে কম্পিউটার অপারেটর ও একজন করে মাঝি।
এখানকার একটি নৌকায় চিকিৎসা সেবা নিতে আসা আয়শা বেগম (৫৫) বলেন, আমরা তো গ্রামের মানুষ, শরীর খারাপ হলি নদী পরি দিয়ে হাসপাতালে যাতি অনেক কষ্ট হয়। এখন এই নৌকায় হাসপাতাল আসাতে আমার তো ভালোই হইছে। বিনামূল্যে ডাক্তার দেখাবের পারতিছি, কিছু ওষুধও দেয়। কষ্ট কইরে আর শহরে যাওয়া লাগে না।
আছির উদ্দিন মোল্লা নামে এক কৃষক বলেন, আমরা সব সময় কষ্ট কইরে যাচ্ছি। নদী এবং বিল এই নিয়ে আমার জীবন। পানি থাকলি ভালো হয়। সহজে সব জায়গায় যাওয়া যায়। আমাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার জন্য নৌকায় স্কুল বানায়ে বাড়ির কাছে শিক্ষা দেচ্ছে। এই নৌকায় স্কুল আসার পর থেকে আমাদের গ্রামে ছেলেমেয়েরা এখন প্রতিদিন স্কুলে যায়।
এই কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো. রেজওয়ান, তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের জন্য কিছু করার। আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি তাদের জীবনযাপন। সমাজের-রাষ্ট্রের অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে এই বালু এবং নদীপারের মানুষগুলো বঞ্চিত। ২০০২ সালে আমার শিক্ষা জীবনের বৃত্তির তিন লাখ টাকা আর এক বিদেশি বন্ধুর কাছ থেকে পাওয়া পাঁচশ’ ডলার দিয়ে একটি নৌকায় যাত্রা শুরু করি। এরপর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। যোগাযোগ করেছি বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গেটস ফাউন্ডেশন। তারা আমাদের এই কার্যক্রমকে সুন্দর এবং আধুনিক করতে দিয়েছেন একশ’ ডেস্কটপ কম্পিটার ও ১৬টি ল্যাপটপ। সম্প্রতি আমাদের দু’টি নৌকা দিয়েছে টার্কিস কোঅপারেশন অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন এজেন্সি নামে তুর্কির একটি প্রতিষ্ঠান।
তিনি বলেন, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটি শুধু পাবনায় না নাটোরের বিল অঞ্চলের মানুষের সেবায়ও নিয়োজিত রয়েছে। সবমিলিয়ে আমাদের ভাসমান নৌকা রয়েছে এখন ৫৬টি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমি গ্রাম অঞ্চলের মানুষের সেবায় কাজ করতে যেতে চাই।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৮
এসআই