সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে ৪টায় সুপ্রিম কোর্ট ভবনের জাজেজ লাউঞ্জে ১২ বিশিষ্টজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত জানায় অনুসন্ধান কমিটি। পরবর্তী মতবিনিময় সভাও একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে।
নতুন করে ডাক পাওয়া পাঁচ বিশিষ্টজন হলেন- সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ।
বিকেল সোয়া ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২ মিনিট পর্যন্ত মতবিনিময় সভা শেষে ব্রিফিংয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব বলেন, ‘সার্চ কমিটি ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তাদেরকে আমাদের কমিটি স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মূল্যবান পরামর্শ ও বক্তব্য শুনেছেন কমিটির সদস্যরা। তারা ইসি ও সিইসি বাছাইয়ে কি ক্রাইটেরিয়া হতে পারে, সে ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো আমরা রেকর্ড করেছি’।
‘এরপর আগামী ০১ ফেব্রুয়ারি বেলা এগারোটায় আরও ৫ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি’।
তিনি বলেন, ‘বিশিষ্টজনদের পরামর্শের সার-সংক্ষেপ হলো, নির্বাচন কমিশনে যারা মনোনীত হবেন, তারা হবেন সৎ ও দক্ষ। পর্ষদটি পরিচালনার জন্য একটি ভালো টিম হবে, এ রকম ব্যক্তিদের যেন বাছাই করা হয়’।
রাজনৈতিক দলগুলোর নাম জমা দেওয়ার সময় ৩১ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে বাড়িয়ে দুপুর ৩টা পর্যন্ত করা হয়েছে বলেও জানান মোহাম্মদ শফিউল আলম।
সভায় অংশ নেওয়া ১২ বিশিষ্টজন হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি আবদুর রশিদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এমিরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এসএমএ ফায়েজ, বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক এবং সাবেক মহাপুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা।
সভা শেষে ড. তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রথমবারের মতো সার্চ কমিটি কিছু নাগরিকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে। আমরা কিন্তু আগে আলোচনা করে একমত হইনি। প্রত্যেকে প্রত্যেকের মতামত তুলে ধরেছেন। কেউ কেউ লিখিতভাবে জমা দিয়েছেন। মোদ্দা কথা হচ্ছে , সার্চ কমিটিকে আমরা যেটি সুপারিশ করেছি, সেটি হচ্ছে, একটা ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে তারা (সার্চ কমিটি) সিলেকশন করবেন। আরেকটি হচ্ছে, সিলেকশন যেটি করছেন, তার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখুন। তাতে মানুষের আস্থা বিশ্বাস বাড়বে। সিলেকশনের ক্ষেত্রে যোগ্যতার মাপকাঠিগুলো তারা বসে চিন্তা করবেন। আমরা কিছু চিন্তার খোরাক দিয়েছি’।
‘আজকে যে জিনিসগুলো দেওয়া হয়েছে, তারা অত্যন্ত পজিটিভলি নিয়েছেন। তারা নিজেরা বসে এগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করে কিছু একটা দাঁড় করাবেন’।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের কাছে নাম চেয়েছেন তারা। আমাদের বক্তব্যও শুনেছেন। এখন কি মানদণ্ডের ভিত্তিতে লোক সিলেকশন করা হবে, তা তাদের জানানো উচিত। এছাড়া আমাদের বক্তব্যের কতোটুকু নেওয়া হয়েছে, সেটিও জানানো উচিত’।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা নাগরিক কমিটির কয়েকজন সদস্য হিসেবে এসেছিলাম। সার্চ কমিটির একটি নিজস্ব কর্মপদ্ধতি আছে। কারা কমিশনে যাবেন না যাবেন, সব দায়িত্ব সার্চ কমিটির, আমাদের নয়। মানুষজন কোন ধরনের ব্যক্তিদের ইসিতে দেখতে চান, সে বিষয়ে আমাদের থেকে ধারণা নেওয়া সার্চ কমিটির উদ্দেশ্য। এটি বিশেষভাবে গবেষণা করে বের করার বিষয় নয়, প্রত্যেকে জানি’।
‘আমরা নির্বাচন কমিশনে এমন ব্যক্তিদের দেখতে চাই, যারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবেন। সেখানে সৎ যোগ্য উপযুক্ত ও জাতীয় দায়িত্ব হিসেবে যারা সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, সে রকম ব্যক্তিদেরই খুঁজে পেতে আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন সার্চ কমিটি’।
সার্চ কমিটির আস্থার সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ সংকটটা বিভাজিত। কিছু মানুষের আছে, কিছু মানুষের নেই। এটির ওপর দাঁড়িয়ে থাকলে আমরা সামনের দিকে এগোতে পারবো না। আস্থার সংকট অনেকটা প্রশমিত হয়ে গেছে’।
‘আমি মনে করি, তারা (সার্চ কমিটি) অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। আস্থা আনাটাও জনগণের নৈতিক দায়িত্ব’।
‘নির্বাচন ভণ্ডুল নির্বাচন কমিশন করে না, সার্চ কমিটিও করবে না। নির্বাচন অস্বচ্ছ বা অন্যরকম হলে তার জন্য মূলত দায়ী রাজনৈতিক দলগুলো’- বলেন সুলতানা কামাল।
আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে সার্চ কমিটির ছয় সদস্যই সভায় অংশ নেন। উপস্থিত সদস্যরা হলেন- সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীণ আখতার।
এর আগে সার্চ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে ৫ জন করে নাম চেয়ে শনিবার (২৮ জানুয়ারি) রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি পাঠানো হয়। একইদিন বিশিষ্ট নাগরিকদের মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন গঠনে সুপারিশ করতে গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি অনুসন্ধান বা সার্চ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন। ওই দিনই ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়।
গঠিত কমিটি ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ প্রণয়ন করে রাষ্ট্রপতির কাছে দেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৭
ইএস/এএসআর
** নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে অনুসন্ধান কমিটির সভা শেষ
** নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে অনুসন্ধান কমিটির মতবিনিময় শুরু
** নাম চেয়ে চিঠি, বিশিষ্ট নাগরিকদের ‘নিমন্ত্রণ’