ঢাকা: রূপপুর গ্রিনসিটি প্রকল্পের ২০ ও ১৬ তলা ভবনের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় এবং ভবনে উঠানোর কাজে অস্বাভাবিক ব্যয়ের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে রাজশাহী গণপূর্ত জোনের সহকারী প্রকৌশলী মোসা. শাহনাজ আখতারকে৷
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে৷
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গণপূর্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেহেতু, মোসা. শাহনাজ আখতার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ই/এম), গণপূর্ত ই/এম পিএন্ডডি বিভাগ, রাজশাহী গণপূর্ত জোন, রাজশাহীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় রূপপুর গ্রিনসিটি প্রকল্পের নির্মাণাধীন ২০ ও ১৬ তলা ভবনের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় এবং ভবনে উঠানোর কাজে অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশ হয়। ওই অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে ১৯ মে ২০১৯ তারিখের ২৫.৩৬.০০০০.২১৩.২৭.৫১৩.২০১৯-৪২৭ নম্বর স্মারকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
পরবর্তীতে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকেও ২০১৯ সালের ১৯ মে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং এ মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত কমিটির দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় এবং ভবনে উঠানোর কাজে অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, তদন্ত কমিটির সুপারিশ মোতাবেক তিনি অস্বাভাবিক ব্যয়ের প্রাক্কলন যাচাই-বাছাই ও অনুমোদনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থেকে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ এর উপবিধি (খ) অনুযায়ী 'অসদাচরণ' এর অভিযোগে ২০/২০১৯ নম্বর বিভাগীয় মামলা করে 'অভিযোগনামা' ও 'অভিযোগ বিবরণী' তার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হয়৷
যেহেতু, তিনি ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর প্রথম কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দাখিল করেন এবং গত ১৯/০১/২০২০ তারিখ তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়। তারপর ওই বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত করার জন্য এ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফারুক আহম্মেদকে সভাপতি, যুগ্মসচিব মো. মনিরুজ্জামান মিঞাকে সদস্য এবং সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আশিক উন নবী তালুকদারকে সদস্য-সচিব করে ৩ (তিন) সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি কর্তৃক অভিযুক্ত কর্মকর্তা মোসা. শাহনাজ আখতার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ই/এম), রাজশাহী গণপূর্ত পিএন্ডডি বিভাগ, রাজশাহী এর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) মোতাবেক আনীত 'অসদাচরণ' এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন মোতাবেক অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে ০১/০৬/২০২৫ তারিখ দ্বিতীয় কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তা ৩০/০৬/২০২৫ তারিখ দ্বিতীয় কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দাখিল করেন। প্রাপ্ত জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪ এর উপবিধি ৩ এর (খ) অনুযায়ী তাকে 'বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান' গুরুদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সে মোতাবেক বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পরামর্শ) প্রবিধানমালা, ১৯৭৯ এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি-৭ এর উপবিধি-১০ মোতাবেক বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনকে পরামর্শ প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন মোসা. শাহনাজ আখতারকে 'বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান' গুরুদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। সুতরাং, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪ এর উপবিধি ৩ এর (খ) অনুযায়ী তাকে 'বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান' গুরুদণ্ড দেওয়া প্রয়োজন।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, মোসা. শাহনাজ আখতার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ই/এম), গণপূর্ত ই/এম এমআইএস বিভাগ-১, গণপূর্ত অধিদপ্তর, ঢাকা ও সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ই/এম), গণপূর্ত ই/এম পিএন্ডডি বিভাগ, রাজশাহী গণপূর্ত জোন, রাজশাহী এর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী 'অসদাচরণ' এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় তাকে 'অসদাচরণ' এর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে একই বিধিমালার বিধি ৪ এর উপবিধি ৩ (খ) অনুযায়ী 'বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান' গুরুদণ্ড প্রদান করা হলো। তিনি বিধি-মোতাবেক যাবতীয় আর্থিক সুবিধাদি প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে জারীকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
জিসিজি/জেএইচ