ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

দ্বিতীয় পর্ব

বিআইডব্লিউটি এতে শাজাহানের সাম্রাজ্য

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:২৩, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫
বিআইডব্লিউটি এতে শাজাহানের সাম্রাজ্য

নৌপরিবহনমন্ত্রী থাকাকালে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন শাজাহান খান। তিনি ছিলেন বিআইডব্লিউটিএর গডফাদার।

এমনকি মন্ত্রিত্ব হারানোর পরও বহাল তবিয়তে ছিল শাজাহান খানের সিন্ডিকেট। আওয়ামী লীগের পতনের পরও তার দোসররা নতুন রূপে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার প্রয়াস চালাচ্ছেন বিআইডব্লিউটিএতে। এসব ব্যক্তি চাকরিতে বহাল থেকে সংঘবদ্ধ হয়ে আওয়ামী শ্রমিক লীগের নামে বিআইডব্লিউটিএর সর্বস্তরে অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি করছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছেন কিছু অসাধু কর্মকর্তা। পতিত সরকার আমলে তারা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। তাদের অনেকের নামে দুদক চেয়ারম্যানের দপ্তরে অভিযোগ থাকলেও নেওয়া হচ্ছে না প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। শাজাহান খানের ১৯৬৪ সালে ছাত্ররাজনীতি দিয়ে হাতেখড়ি। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে মাদারীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হন শাজাহান খান। জাসদে যোগ দিয়ে জেলা জাসদের যুগ্ম আহ্বায়ক হন। ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো এমপি হন। ১৯৯১ সালে জাসদ ছেড়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হন। এরপর প্রতিটি সংসদে তিনি এমপি ছিলেন। ২০০৯ সালে নৌমন্ত্রী হন শাজাহান খান। নৌ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিআইডব্লিউটিএর প্রতিটি সেক্টরে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলেন। বন্দরসহ সব সেক্টরে টেন্ডার বাণিজ্য করে টাকার মেশিন বনে যান তিনি। তার ভয়ে সবাই থাকতেন তটস্থ। শাজাহান খানের সন্ত্রাসী বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে গত সাড়ে ১৫ বছর বিআইডব্লিউটিএতে ঢুকতে পারেননি সাধারণ লোকজন। শাজাহান খানের সিন্ডিকেটের বাইরে কোনো ঠিকাদার কাজ পেতেন না। দুই প্রভাবশালী মন্ত্রীর লোকজন প্রমোশন, ঠিকাদারি, নিয়োগ, ঘাট ইজারাদারসহ সবকিছুই করতেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দমন-নিপীড়ন করতেন।

নৌপরিবহনমন্ত্রী থাকা অবস্থায় শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর ও স্ত্রী সৈয়দা রোকেয়া বেগমের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দরে বিপুল কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। নৌপরিবহন মন্ত্রণলায়ের অধীন জাহাজ মেরামত ও নদী খননের ব্যবসা করতেন শাজাহানের বিশ্বস্ত আবদুর রশিদ। বিভিন্ন পথে চলাচলকারী জাহাজ ব্যবসাও আছে তার। কর্ণফুলী নদী দখল করে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় রশিদের মালিকানাধীন ‘ড্রাই ডক’ নির্মাণে সুযোগ দেন শাজাহান খান। কুমিল্লায় রশিদের গ্রামের বাড়িতে দাওয়াতও খান শাজাহান খান। মাসিক মোটা টাকা দিতেন রশিদ। বিআইডব্লিউটিএর একাধিক ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন দপ্তরের উন্নয়ন প্রকল্পের কে কোন কাজ পাবেন, সেটা ঠিক করে দিতেন শাজাহান খান। তাকে প্রকল্পের মোট বরাদ্দের ৩ থেকে ক্ষেত্রবিশেষে ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিতে হতো। ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে চলাচলের জন্য ২০১০ সালে ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করা ৫০০ কোটি টাকা প্রকল্পের ওয়াটার বাস এখন আর চলছে না। বন্ধ রয়েছে ২০২০ সাল থেকেই। ওয়াটার বাসের প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের নির্দেশে। ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মের এ প্রকল্প থেকে তার বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একটি ওয়াটার বাস তৈরিতে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা খরচ হলেও শাজাহান খানের নির্দেশে একেকটির নির্মাণ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা। ওয়াটার বাস প্রকল্প এবং বুড়িগঙ্গা খননকাজে শাজাহান খান কয়েক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০২ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন নৌপরিবহনমন্ত্রী থাকাকালে ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে শহরের চারদিকে ৪টি নৌপথ চালুর উদ্যোগ নেন। তখন তিনি বুড়িগঙ্গা, বালু, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদীর ২৯ কিলোমিটার নৌপথ সচল করেন। সে লক্ষ্যে সাতটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে ঢাকা শহরের যানজট নিরসন প্রকল্পের আওতাধীন নদী খনন শুরু করা হয়। তখন দুটি ওয়াটার বাসের মাধ্যমে প্রকল্প চালু করা হয়। ওয়াটার বাসের জন্য বুড়িগঙ্গার তীরে বিভিন্ন পয়েন্টে ৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি ল্যান্ডিং স্টেশন তৈরি করা হয়। ২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর এ প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতিবাজ নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান দ্বিতীয়বারের মতো বুড়িগঙ্গায় ওয়াটার বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেন। পর্যায়ক্রমে ১২টি ওয়াটার বাস তৈরিতে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আবারও ঢাকার বাদামতলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার দূরত্বের নদীপথে ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু করা হয়। কিন্তু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সফলতার মুখ দেখেনি ওয়াটার বাসগুলো। তবে সফল হয়েছেন সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।

অনুসন্ধানকালে বিআইডব্লিউটিসির বাদামতলী ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ময়লা-আবর্জনা ও জং ধরা অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে একসময় বুড়িগঙ্গা কাঁপানো ৪টি ওয়াটার বাস। এ সময় ওয়াটার বাস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিআইডব্লিউটিসির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা ওয়াটার বাসের চালক বা হেলপারকে বাদামতলী ঘাটে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বাদামতলী ও ওয়াইজঘাট থেকে গাবতলী পর্যন্ত ওয়াটার বাস ভেড়ানোর জন্য তৈরি করা ল্যান্ডিং পয়েন্ট টার্মিনালগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। টার্মিনালে ওয়াটার বাস কর্তৃপক্ষের কাউকেই পাওয়া যায়নি। কেরানীগঞ্জের গোলামোড়া টার্মিনাল ঘাটের নৌকার মাঝি ইদ্রিস জানান, গত পাঁচ বছরে কোনো কর্মকর্তাকে তিনি এ টার্মিনালে দেখেননি। টার্মিনালগুলো দখল করে আছে মাদকাসক্ত ও ছিন্নমূল মানুষেরা।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

এনডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ