ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৯ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারে ছাত্রশিবিরের ৩০ দফা প্রস্তাবনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:১৬, আগস্ট ১৪, ২০২৫
শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারে ছাত্রশিবিরের ৩০ দফা প্রস্তাবনা

শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ এবং সামাজিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে পুনর্গঠনের জন্য ৩০ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।   

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরেন।

এতে পাঠ্যক্রম, শিক্ষানীতি, ব্যবস্থাপনা, উচ্চশিক্ষা, শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংস্কারের দাবি জানানো হয়েছে।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষা সংস্কারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি বা ঘোষণা নেই। একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক করা অপরিহার্য। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই ক্ষেত্রটি উপেক্ষিত হচ্ছে, যা খুবই হতাশাজনক। ছাত্রশিবির বিশ্বাস করে একটি আদর্শ জাতি গঠনে সুশিক্ষার বিকল্প নেই। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো ঔপনিবেশিক মনোভাব, পাশ্চাত্য আগ্রাসন এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রভাবে প্রভাবিত। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা কমিশন গঠিত হলেও রাজনৈতিক স্বার্থে সেগুলোর প্রস্তাবনা বারবার পরিবর্তন করা হয়েছে।  

২০১০ সালের শিক্ষানীতিকে ‘একপাক্ষিক ও দুরভিসন্ধিমূলক’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২২ সাল থেকে এর পূর্ণ বাস্তবায়ন শুরু হয়, যার মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষাকে বিকৃত করে শিরক ও বিদ'আতের মতো ইসলামবিরোধী বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা জরুরি, যা নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেবে। ইসলামী আদর্শই এক্ষেত্রে একমাত্র সমাধান, কারণ এটি সবাইকে সমানভাবে অন্তর্ভুক্ত করে এবং নৈতিক ও মানবিক শিক্ষায় দীক্ষিত করে।

সংবাদ সম্মেলনে দেশের শিক্ষা খাতে অপ্রতুল বাজেট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। জাহিদুল ইসলাম বলেন, ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী একটি দেশের শিক্ষা খাতে জিডিপির কমপক্ষে ৬ শতাংশ বরাদ্দ থাকা উচিত। অথচ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই হার ২ শতাংশেরও কম।  

তিনি সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত এবং চীনের মতো দেশগুলোর উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেখানে শিক্ষা খাতে অনেক বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা বাংলাদেশের করুণ চিত্রকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের মাত্র ১.৮-২ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী খুবই নগণ্য।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র শিবিরের পক্ষ থেকে  ৩০ দফা শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবনা করা হয়। সেগুলো হলো- অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা কমিশন গঠন; জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তকরণ; ইসলামী মূল্যবোধ ও নৈতিকতার সমন্বয়ে আধুনিক শিক্ষাক্রম প্রণয়ন; বহুমাত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ; বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত শিক্ষায় অগ্রাধিকার প্রদান; ভাষা শিক্ষা সংক্রান্ত; সামরিক ও শারীরিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ; শিক্ষা বাজেট অগ্রাধিকার; শিশুদের জন্য আনন্দদায়ক স্কুলিং পদক্ষেপ; উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক শিক্ষা আইন প্রণয়ন; স্বাধীন ও স্বতন্ত্র নিয়োগ কমিশন গঠন; নারী শিক্ষার প্রসারে উপর্যুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ; শিক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন; শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ আবাসন নিশ্চিত ও ব্যবস্থাপনায় আধুনিকীকরণ; মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও কাউন্সেলিং ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ; শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষাঙ্গন বাস্তবায়ন; যোগ্য ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ গঠন; গবেষণামুখী উচ্চশিক্ষা; মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা সংক্রান্ত; কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধি; মূল্যায়ন পদ্ধতির সংস্কার; শিক্ষক প্রশিক্ষণ কাঠামোর আধুনিকায়ন; শিক্ষক মূল্যায়নের কার্যকর পদ্ধতি প্রবর্তন; চাকরিতে সমান সুযোগ ও ন্যায়ভিত্তিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ; ছাত্ররাজনীতির যথাযথ চর্চা ও নিয়মিত ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজন; বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ; পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মূলধারার শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তকরণ; কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে বেকারত্ব হ্রাস; উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার উন্নয়ন ও সমান অধিকার নিশ্চিতকরণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিভাবক-অংশগ্রহণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, শিক্ষানীতি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে অন্যতম প্রধান নিয়ামক। ৩০ দফা শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবকে আলোচনার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে দ্রুত শিক্ষা সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। প্রকাশিত ঘোষণাপত্রে শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবনা অন্তর্ভুক্ত করে জুলাই সদন প্রণোয়ণ ও আইনি ভিত্তি প্রদান করতে হবে। অন্যথায় জুলাই অভ্যুত্থানে সহস্রাধিক শহীদ ও আহত মানুষের আত্মত্যাগের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত হবে না এবং অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সৎ ও যোগ্য প্রজন্ম তৈরি করে সবার বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।  

ইএসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।