বাস ও ট্রাক চালকদের স্বাস্থ্য ও চক্ষু পরীক্ষা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) থেকে তিন দিনব্যাপী এই কর্মসূচি ৩১ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাসটার্মিনাল এবং তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালে এই কর্মসূচি পরিচালিত হবে। এই উদ্যোগে এক হাজার বাস ও ট্রাক চালকের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ও চক্ষু পরীক্ষা করা হবে।
বিআরটিসি তেজগাঁও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন বলেন, চালকদের চোখ নিয়মিত পরীক্ষা করানো হলে প্রতি বছর সড়কে বহু মানুষের মৃত্যু ঠেকানো যাবে।
তিনি উল্লেখ করেন, অনেক সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হলো চালকদের চোখের রোগ। সচেতনতার অভাবে তারা চোখ পরীক্ষা করান না। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৬০ শতাংশ যানবাহন চালক বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় এবং ৬৬ শতাংশ চালক চোখের সমস্যায় ভুগছেন। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে সরকার এক হাজার বাস ও ট্রাক চালকের স্বাস্থ্য ও চক্ষু পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিশেষ সহকারী এই কার্যক্রম চলমান রাখার এবং দেশের সকল চালককে এর আওতায় আনার আশাবাদ ব্যক্ত করেন, যাতে চালকদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যায় এবং দুর্ঘটনা হ্রাস পায়।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) নীলিমা আখতার বলেন, চালকদের নিয়মিত স্বাস্থ্য ও চোখ পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি, কারণ গাড়ি চালাতে গিয়ে চালকদের শারীরিক, মানসিক ও চোখের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে। বিআরটিএ ও আহছানিয়া মিশন পরিচালিত গত ২০২৩ সালের কার্যক্রমে দেখা গেছে, প্রায় ৬৩ শতাংশ চালক স্বাস্থ্য সমস্যায় এবং ৬৭ শতাংশ চালক চোখের সমস্যায় ভুগছেন। যাদের চোখের পাওয়ার সমস্যা নির্ণয় হবে, তাদের ভিশন স্প্রিং-এর সহায়তায় বিনামূল্যে চশমা দেওয়া হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এই উদ্যোগকে অর্থবহ উল্লেখ করে বলেন, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পরিবহন খাতে প্রায় ৬০ শতাংশ চালক স্বাস্থ্য সমস্যায় এবং প্রায় ৬৬ শতাংশ চালক চোখের সমস্যায় ভুগছেন।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, গণপরিবহন চালকদের মধ্যে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা একটি সাধারণ বিষয়। একাধিক প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় ৭০ শতাংশ গণপরিবহন চালক দৃষ্টি সমস্যায় ভোগেন। তিনি চালকদের লাইসেন্স প্রদান এবং নবায়নের পূর্বে চক্ষু পরীক্ষা করার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং সকল চালককে এই স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি সতর্ক হওয়ার অনুরোধ জানান।
এই কার্যক্রমে ব্লাড প্রেসার, ব্লাড সুগার লেভেল, অক্সিজেন লেভেল, উচ্চতা ও ওজন পরিমাপসহ সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চোখের চাপ, কালার ভিশন, গ্লুকোমা/রেটিনা, পাওয়ার পরিমাপ ও নাইট ভিশন পরীক্ষাসহ চক্ষু পরীক্ষা করা হবে।
এই উদ্যোগকে সফল করতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা সহযোগিতা করছে, যার মধ্যে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, দৃষ্টি উন্নয়ন সংস্থা (ডাস), আল-নূর চক্ষু হাসপাতাল, ভিশন স্প্রিং, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্ট সোসাইটি (বিএমএসএস), রোটারী ক্লাব আবহানীকুঞ্জ ঢাকা, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, লাইফ সাইকেল বিডি, ইফাদ গ্রুপ, নিটল টাটা গ্রুপ, রানার গ্রুপ, র্যাঙ্কস পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, এডিএন টেকনোলজিস এবং শেল উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও বিআরটিসি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন স্থান ও সার্বিক সহায়তা করছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ মোল্লা (অতিরিক্ত সচিব), সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এমআএইএইচ/এমজেএফ