ঢাকা, শনিবার, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৯ জুলাই ২০২৫, ২৩ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

চোখের জলে বছর পার শহীদ সাংবাদিক তুরাবের মায়ের

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৩৯, জুলাই ১৯, ২০২৫
চোখের জলে বছর পার শহীদ সাংবাদিক তুরাবের মায়ের শহীদ সাংবাদিক তুরাব

জুলাই শহীদ এ টি এম তুরাবের বয়োবৃদ্ধ মা মমতাজ বেগম। আগে একা একা চলাচল করতে পারলেও ছেলে হারানোর শোকে ভেঙে পড়েছে তার শরীর।

এখন আর একা চলাচল করতে পারেন না। অন্যের সাহায্য নিয়ে চলতে হয়। আদরের সন্তানের পোশাক আঁকড়ে ধরে বিছানায় শুয়ে থাকেন।

বাড়িতে তুরাবের সহকর্মীদের দেখেই তার আহাজারি আরও বেড়ে গেল। তুরাবের বড় ভাই জাবুরকে দিয়ে সহকর্মীদের নিজের কাছে ডেকে নিয়ে জড়িয়ে ধরেন। হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। বুকফাটা কান্নায় তার দমবন্ধ হয়ে আসে প্রায়। ছেলেহারা মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার সাধ্য নেই কারো। এভাবে কেঁদে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসকের কাছে নিতে হয় বারবার। তার একটাই প্রশ্ন—‘ও বাবারা আমার তুরাবের হত্যাকারীদের বিচার কি দেখে যেতে পারব না?’ বলে আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তুরাবের মা মমতাজ বেগমের এই প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা।

মৃত্যুর আগে হলেও ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান শহীদ সাংবাদিক তুরাবের মা মমতাজ বেগম। প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দেখে যেতে পারলে তার মনে শান্তি আসবে। তুরাবের আত্মা শান্তি পাবে, বলেন তিনি।

শনিবার (১৯ জুলাই) তুরাব হত্যার এক বছর পূর্ণ হলেও এখন পর্যন্ত মামলার দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এমন হতাশার কথা জানিয়ে তুরাবের বড় ভাই আবু হাসান মো. আজরফ জাবুর বলেন, মামলার অগ্রগতি নিয়ে আমরা হতাশ। তুরাবকে পুলিশ পরিকল্পিতভাবে গুলি করে মেরেছে। ঘটনার বছর পেরিয়ে গেলেও চার্জশিট পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। আমার বৃদ্ধ মা প্রতিদিনই তুরাবের কথা স্মরণ করে কান্না করেন। তার শেষ ইচ্ছা তুরাবের খুনিদের বিচার দেখতে চান। কিন্তু জানি না আমার মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ হবে কি না। পুলিশ এখনো আমার ভাইয়ের খুনিদের গ্রেপ্তার করেনি। সরকারের কাছে একটাই চাওয়া, আমার ভাই তুরাবের খুনিদের যেন দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।

গত বছরের ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর বেলা ২টায় সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্ট থেকে মিছিল বের করে বিএনপি। মিছিল জিন্দাবাজারের দিকে যাওয়ার সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের ছোড়া গুলিতে গুরুতর আহত হন তুরাব। সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন সন্ধ্যায় প্রাণ হারান সাংবাদিক আবু তাহের মো. তুরাব।

বিয়ানীবাজার উপজেলার ফতেহপুর গ্রামের মাস্টার আব্দুর রহিমের চার সন্তানের সবার ছোট তুরাব। তার বড় দুই ভাই ছাড়াও এক বোন রয়েছেন। তুরাব দৈনিক নয়াদিগন্ত ও দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন।

তুরাবের মৃত্যুর পর তার বড় ভাই আবুল হাসান মো. আজরফ জাবুর বাদী হয়ে গত বছরের ১৯ আগস্ট সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. সাদেক দস্তগির কাউছার, অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখসহ ১৮ জনের নামে মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২৫০ জনকে আসামি করা হয়।

সিলেটের মুখ্য মহানগর আদালতের হাকিম অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে রেকর্ডভুক্ত করার জন্য কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। কোতোয়ালী মডেল থানা থেকে বর্তমানে মামলাটি সিআইডির তদন্তাধীন রয়েছে। এখন পর্যন্ত এই মামলায় দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। কিন্তু গত এক বছরে বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থতা এবং চার্জশিট দিতে না পারায় সবার মাঝের ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ৪০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন—এসএমপির সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. সাদেক দস্তগির কাউছার ও কনস্টেবল উজ্জ্বল সিংহ। তাদের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আগামী রোববার রিমান্ড শুনানি হবে। আসামিদের তথ্য ব্যাপক তদন্তের স্বার্থে কিছুটা সময় বিলম্বিত হচ্ছে।

সিলেট বিভাগীয় ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোশিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইশকার ইবনে আমিন রাব্বি বলেন, এক বছরে একাধিক বার আমরা সাক্ষ্য দিয়েছি। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ার আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি দেখতে পাইনি। পুলিশের একজন নিরস্ত্র কর্মকর্তা কীভাবে অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে হত্যা করতে পারেন! এখন আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দিকে তাকিয়ে আছি।

এনইউ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ