২০২৪ সালের ১৯ জুলাই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জে সশস্ত্রভাবে রাস্তায় নামে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
ঘটনার দিন ছিল শুক্রবার। জুমার নামাজের পরপরই চাষাঢ়া থেকে গাড়িবহর নিয়ে বের হন শামীম ওসমান। শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই কিলোমিটার জুড়ে একাধিক দফায় চলে মহড়া ও গুলি। অস্ত্রধারীদের হাতে ছিল অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, ধারাল রামদা ও চায়নিজ কুড়াল।
তখনকার নানা ভিডিও ও ছবিতে শামীম ওসমানের নেতৃত্বে তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু, ছেলে অয়নের শ্বশুর ফয়েজউদ্দিন লাভলু, লাভলুর ছেলে মিনহাজুল ইসলাম ভিকি, আওয়ামী লীগ নেতা শাহ নিজাম, ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান রিয়াদ, রাফেল প্রধান, কাওসার আহমেদ, সোহানুর রহমান শুভ্রসহ অনেককে গুলি চালাতে দেখা যায়।
সেই দিন থেমে থেমে পুলিশও আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ে।
সেই সহিংসতার সময় বাড়ির ছাদে খেলছিল নারায়ণগঞ্জের শিশু রিয়া গোপ। বিকেলে গোলাগুলির শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে ছাদে ছুটে যান তার বাবা দীপক কুমার গোপ। মেয়েকে কোলে তুলে নিতেই গুলি এসে বিদ্ধ হয় রিয়ার মাথায়।
তৎক্ষণাৎ রিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে পরে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রাতেই অস্ত্রোপচার হয় রিয়ার মাথায়। এরপর পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ৮ বছরের শিশু রিয়া মৃত্যুবরণ করে। বাবা দীপক কুমার গোপ এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না, তার সন্তান আর কখনো ‘বাবা’ বলে ডাকবে না।
রিয়াকে কারা গুলি করেছিল? বাংলানিউজের এ প্রশ্নের জবাবে রিয়ার বাবা বলেন, আমি কাউকে দায়ী করতে চাই না। দেখলে হয়তো বলতে পারতাম। যেহেতু দেখিনি, তাহলে আর কী বিচার চাইবো?
রিয়া গোপের মৃত্যুর প্রায় ১১ মাস পর, ২০২৫ সালের ১ জুলাই রাতে সরকার পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু রায়হান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় ১৫০ থেকে ২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাসির আহমদ। তিনি বলেন, মামলাটি ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ সময়েও না হওয়ায় পুলিশ নিজেই এটি দায়ের করেছে।
দীপক কুমার গোপ বাংলানিউজকে বলেন, আমি যা হারিয়েছি, তা তো আর কোনোদিন ফিরে পাবো না। আমার মানসিক সেই অবস্থা নেই। আমি বিধ্বস্ত। আমার স্ত্রীও অসুস্থ, তার চিকিৎসা চলছে। আমরা মানসিকভাবে পুরো পরিবার ভেঙে পড়েছি।
মামলার বিষয়ে দীপক কুমার গোপ বলেন, শুনেছি কয়েকদিন আগে সরকার বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। তারা যদি বিচার করে, করবে। আমার কিছু বলার নেই।
এমআরপি/এমজে