ঢাকা, শনিবার, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৪ জুন ২০২৫, ১৭ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্নীতিতে অভিযুক্ত টিউলিপকে সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না ড. ইউনূস

নিউজ ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:৩৫, জুন ১২, ২০২৫
দুর্নীতিতে অভিযুক্ত টিউলিপকে সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না ড. ইউনূস অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডন সফরের সময় লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন। খবর বিবিসির।

নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করতেই টিউলিপ সিদ্দিক সাক্ষাতের অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই অভিযোগ ‘আদালতের বিষয়’ এবং তিনি এই তদন্তে নিযুক্ত বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওপর আস্থা রাখেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযোগ করেছে, টিউলিপ সিদ্দিক তার খালা শেখ হাসিনার সরকারের কাছ থেকে অবৈধভাবে জমি পেয়েছেন। শেখ হাসিনা গত বছর বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত হন।

সাবেক ট্রেজারি মন্ত্রী সিদ্দিক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বাংলাদেশের সরকারের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানোর অভিযোগ তুলেছেন।

কদিন আগেই এক চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিক নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ জানান।

অধ্যাপক ইউনূস বর্তমানে বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যা ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর গঠিত হয়।

সিদ্দিক চিঠিতে বলেন,  এই সাক্ষাৎ ‘ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশন যে ভুল বোঝাবুঝি ছড়াচ্ছে, তা দূর করতেও সহায়ক হতে পারে। ’

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ ইউনূসকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি কি এই সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে চার দিনের সফরের সময় টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন কি না।

অধ্যাপক ইউনূস জবাব দেন, ‘না, আমি সাক্ষাৎ করছি না, কারণ এটি একটি আইনগত প্রক্রিয়া। আমি এই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে চাই না। প্রক্রিয়াটি চলতে দিন। ’

টিউলিপ সিদ্দিকের দাবি, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন এখনও পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি এবং তার আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও রাজি হয়নি।

এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এটি আদালতের বিষয়। ’ তিনি বলেন, ‘আদালতই সিদ্ধান্ত নেবেন, মামলাটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট উপাদান আছে কি না, অথবা তা খারিজ হবে কি না। ’

বাংলাদেশে বিচার আরও স্বচ্ছ হওয়া উচিত কি না এবং টিউলিপ সিদ্দিককে কোনো ভুলকর্মের প্রমাণ দেওয়া উচিত কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আমি আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখি এবং আমি মনে করি তারা সঠিক কাজই করছে। ’

বাংলাদেশে যদি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়, তবে তার প্রত্যর্পণ  চাইবেন কি না — এমন প্রশ্নে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘যদি এটি আইনগত প্রক্রিয়ার অংশ হয়, তবে অবশ্যই। ’

এক বিবৃতিতে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, মুহাম্মদ ইউনূস তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় তিনি হতাশ।

তিনি বলেন, ‘তিনি এমন এক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন, যা কল্পনাভিত্তিক অভিযোগে দাঁড় করানো হয়েছে—এগুলোর কোনো প্রমাণ নেই, অথচ সেগুলো বারবার মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ’

টিউলিপ সিদ্দিক আরও বলেন, ‘যদি এটি সত্যিকার অর্থে আইনগত প্রক্রিয়া হতো, তাহলে তারা আমার আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। বরং তারা এমন একটি ঢাকার ঠিকানায় ভুয়া কাগজপত্র পাঠাচ্ছে, যেখানে আমি কখনো থাকিইনি। ’

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, তিনি এখন অন্তত গণমাধ্যমে আমাকে নিয়ে অপপ্রচার বন্ধ করবেন এবং আদালতকে নিরপেক্ষভাবে সিদ্ধান্ত নিতে দেবেন যে এই তদন্তের সঙ্গে আমার—একজন ব্রিটিশ নাগরিক ও যুক্তরাজ্যের গর্বিত সংসদ সদস্য হিসেবে—কোনো সম্পর্ক নেই। ’

চলতি বছরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের নৈতিকতাবিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস যখন অভিযোগগুলো তদন্তের উদ্যোগ নেন, তখন টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রিসভার পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

আরএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।