ঢাকা, রবিবার, ২৯ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘মার্চ ফর গাজা’র ঘোষণাপত্র

পাসপোর্টে  ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ পুনর্বহালের দাবি উঠল সমাবেশে

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৫
পাসপোর্টে  ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ পুনর্বহালের দাবি উঠল সমাবেশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে লাখো মানুষের ঢল। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের বিচার, গণহত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ, ইসরায়েলি পণ্য বয়কট এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা। এছাড়াও তারা বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ (ইসরাইল ব্যতীত) পুনর্বহাল এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়াসহ একাধিক দাবি জানিয়েছেন।

 

শনিবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের সর্বসম্মতিক্রমে তৈরি ঘোষণাপত্রে এসব দাবি জানানো হয়।  

ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।  

ঘোষণাপত্রের প্রথম অংশে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি, দ্বিতীয় অংশে মুসলিম বিশ্বের সরকার ও উম্মাহের প্রতি এবং তৃতীয় অংশে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি পৃথক দাবি জানানো হয়।

জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি উদ্দেশ্য করে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, পশ্চিমা শক্তিবলয়ের অনেক রাষ্ট্র সরাসরি দখলদারকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে এই গণহত্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে। এই বিশ্বব্যবস্থা দখলদার ইসরায়েলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সেহেতু—আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বলছি-

১. জায়নবাদী ইজরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে। ২. যুদ্ধবিরতি নয়—গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ৩. ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে। ৪. পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। ৫. ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা, এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে।

দ্বিতীয় দফায় মুসলিম উম্মাহর নেতাদের প্রতি বলা হয়, যেহেতু আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিন কেবল একটি ভূখণ্ড নয়-এটি মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের অংশ; এবং-গাজা এখন কেবল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর নয়-এটি আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার বেদনাদায়ক প্রতিচ্ছবি; এবং-ভারতের হিন্দুত্ববাদ আজ এই অঞ্চলে জায়নবাদী প্রকল্পের প্রতিনিধিতে পরিণত হয়েছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত দমন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে এবং-ভারতে সম্প্রতি ওয়াক্ফ সম্পত্তি আইনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মুসলিমদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক অধিকার হরণ করা হয়েছে-যা উম্মাহর জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা।

ছবি: জিএম মুজিবুর

এতে তারা মুসলিম বিশ্বের সরকার ও ওআইসিসহ মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর নিকট দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানান—১) ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সকল সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে; ২) জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে; ৩) গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে; ৪) আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে একঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে; ৫) জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াক্ফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে।

তৃতীয় অংশে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ছয়টি দাবি জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়- ১) বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে এবং ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে; ২) সরকারের ইসরায়েলি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে; ৩) রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে; ৪) সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে; ৫) জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে; এবং ৬) পাঠ্যবই ও শিক্ষানীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন, এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ঘোষণাপত্র পাঠকালে মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, সর্বশেষ দাবিগুলো নিজেদের প্রতি, যা মূলত একটি অঙ্গীকারনামা। আজ যদি আমরা প্রস্তুত না হই, তাহলে কাল আমাদের সন্তানেরা হয়তো এমন এক বাংলাদেশ পাবে-যেখানে হিন্দুত্ববাদ ও জায়নবাদী একত্রে নতুন গাজা তৈরি করবে।

নিজেদের প্রতি জানানো দাবিগুলো হলো- ১) আমরা সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বয়কট করবো-প্রত্যেক সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে যারা ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে; ২) আমরা আমাদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করবো-যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সকল প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে। ৩) আমরা আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলব-যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে; ৪) আমরা বিভাজিত হবো না-কারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, যাতে এই বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়।

ঘোষণাপত্র পাঠের সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী, শায়খ আহমদুল্লাহ, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করিম, বাংলাদেশ খেলাফল মজলিশের আমির মওলানা মো. মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব সাজিদুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর,  নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরস মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানি, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামিক বক্তা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।

আরও নিউজ>> 

ফিলিস্তিনিদের জন্য সোহরাওয়ার্দীতে লাখো মানুষের মোনাজাত

দল-মত নির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষ ফিলিস্তিনিদের পাশে আছে: শায়খ আহমাদুল্লাহ

ফিলিস্তিনি শিশুর প্রতীকী লাশ নিয়ে প্রতিবাদ

ভৌগলিকভাবে দূরে হলেও আমাদের হৃদয়ে বাস করে এক একটা গাজা: আজহারী

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৫
এফএইচ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।