ময়মনসিংহ: ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম মানিক বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার মজলিশপুর গ্রামে।
তিনি ময়মনসিংহে বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ থাকতেন।
রোববার (৩০ মার্চ) ঈদ করতে সপরিবারে যাচ্ছিলেন গ্রামের বাড়ি গৌরীপুর উপজেলার ৯ নম্বর ভাংনামারী ইউনিয়নের দুর্বাচর গ্রামে।
সকাল ৭টার দিকে গৌরীপুর উপজেলা চন্দ্রপাড়া ও সদর উপজেলার সাহেব কাচারী-সংলগ্ন ময়মনসিংহ কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মানিকের স্ত্রী দিলরুবা (৪০), দুই মেয়ে প্রীতি (৭), রীতি (১৪) এবং শাশুড়ি কুলছুমা বেগম (৯৫)।
শহরের স্বদেশী বাজারে বাবার রেখে যাওয়া মাহি স্টোর নামে রুল পলিথিনের দোকান চালাতেন মানিক মিয়া। পরিবার নিয়ে ময়মনসিংহ শহরের নাটক ঘরলেন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন।
বড় মেয়ে মারিয়া আক্তার মাহি (১৬) এইবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। মেঝো মেয়ে রীতিকে নগরীর সিটি স্কুলে এইবার অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। আর সবার ছোট মেয়ে প্রীতিকে নগরীর সেওড়া মুন্সিপাড়া প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করান।
সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করার জন্য দিনরাত দোকানে কাজ করে যাচ্ছিলেন মানিক মিয়া। তবে সেই স্বপ্ন চোখের পলকেই শেষ হয়ে গেল। নিজ হাতে স্ত্রী সন্তানকে কবরে রেখে এখন পাগলপ্রায়।
পরিবারের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। তিনি বলেন, সন্ধ্যা হলেই আমার স্ত্রীর ফোন চলে আসতো কখন তুমি বাসায় ফিরবে। আমার স্ত্রীর স্বপ্ন ছিল বড় মেয়েটাকে নার্সিংয়ে পড়াবে। আজ সেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে অনেক দূরে।
তিনি আরও বলেন, ছোট মেয়ে প্রীতিও সেহরি খেয়েছিল সকালে আর খায়নি। সেহরিতে তার আম্মু বলেছিল এখন তুমি খেয়ে নাও আমরা সকালে রওনা দিব তখন সময় পাবো না। কথা ছিল বাড়িতে গিয়ে খাবে, আমার মেয়েটার আর খাওয়া হলো না।
সড়ক দুর্ঘটনার পর ছোট মেয়েটা আমার কোলেই মারা যায়। আমি কীভাবে ভুলবো মা তোমাকে।
মেঝো মেয়ে রীতি চকলেট, চানাচুর খেতে পছন্দ করতো। সে অল্প কিছুতেই খুশি থাকতো। মেয়েটা খুবই মায়াধারী ছিল। তার মা সবসময় মেয়েদের স্কুল প্রাইভেট এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। দিনে কয়েকবার তিনি স্কুল ও প্রাইভেটে মেয়েদের নিয়ে আসা যাওয়া করতেন। সন্ধ্যার পর তিন মেয়েকে নিয়ে সুখ দুঃখের কথা বলতেন।
মানিক মিয়া এসব স্মৃতিচারণ করছিলেন আর বারবার নির্বাক হয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে কাকে যেন খুঁজছিলেন।
প্রীতি-রীতির মামি সিমা আক্তার বলেন, আপা সবসময় আমাদের খোঁজ-খবর রাখতেন। ঈদের আগে তাদের চলে যাওয়াটা স্মৃতি করে গেল, এখন থেকে ঈদ এলেই তাদের এই দুর্ঘটনার কথা মনে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, বড় মেয়েটাকে আমার কাছে রেখে গেছে আমি তার জন্য সর্বোচ্চটা করবো। আগে আমার এক মেয়ে ছিল এখন আমার মেয়ে দুইটা। বড় মেয়ের সামনে আমরা কান্নাও করতে পারি না যদি সে কষ্ট পায়।
স্ত্রী-দুই সন্তান হারিয়ে সাইফুল ইসলাম মানিক এখন বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন বড় মেয়ে মারিয়া আক্তার মাহিকে নিয়ে।
উল্লেখ, গত (৩০ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ময়মনসিংহ- কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের গৌরীপুর উপজেলা চন্দ্রপাড়া ও সদর উপজেলার সাহেব কাচারী-সংলগ্ন এলাকায় যাত্রীবাহী একটি অটোরিকশাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় যাত্রীবাহী একটি বাস। এতে অটোরিকশায় থাকা একই পরিবারের চারজন মারা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২৫
আরএ