ঢাকা: বিপুল সংখ্যক মাদকসহ তরিকুল ইসলাম ও উজ্জল মিয়া নামে গ্রেপ্তার দুই আসামিকে গত ১৯ আগস্ট আদালতে হাজিরের দিনই জামিন দেন আদালত। একটি জাতীয় দৈনিকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জামিন বাতিলের আদেশে আদালত উল্লেখ করেন, ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ অস্বচ্ছ ও বেআইনি। তারা এফআইআর নামীয় আসামি ও তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। তারা ঘটনাস্থল হতে হাতেনাতে বিপুল সংখ্যক মাদক ও চোরাচালানকৃত ক্ষতিকর ওষুধসহ ধরা পড়েন। তারা মাত্র একদিন আগে ধরা পড়েন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। তাদের ছেড়ে দেওয়া হলে পলাতক হওয়ার ও সাক্ষ্যপ্রমাণ প্রভাবিত করতে পারেন। উপরোক্ত বিষয় ও অবস্থাধীন এ সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছি যে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ দানের ক্ষেত্রে ভুল করেছেন এবং এখতিয়ার বহির্ভূত হস্তক্ষেপ করেছেন। তাই এ দুই আসামির জামিন বাতিল করা হলো। দুজনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণের আদেশ দেওয়া হলো। সে অনুযায়ী বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যুর জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
এর আগে গত ১৯ আগস্ট গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজিরের দিনই অস্বাভাবিকভাবে দুই আসামি জামিন পান। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়া উদ্দিন আহমেদ তাদের জামিন দেন।
একটি জাতীয় দৈনিকে এ জামিনের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এক ‘মাদক পাচারকারী’কে গ্রেপ্তার করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। গ্রেপ্তার ব্যক্তি ৩১ ঘণ্টার মধ্যে জামিন পেয়েছেন। এ ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন অধিদপ্তরটির কর্মকর্তারা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অধিদপ্তরের একটি দলের সদস্যরা গত সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর গুলশানের মাদানী অ্যাভিনিউ থেকে মো. তরিকুল ইসলাম (৩৭) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, তরিকুল আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের সদস্য। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই দিনই সকাল ১০টার দিকে অভিযান চালানো হয় তার কার্যালয়ে, যেটি ঢাকার গ্রিন রোডের বাইতুল লাজ নামের একটি ভবনের চতুর্থ তলায় অবস্থিত। অভিযানকারী দলের সদস্যরা গেলে কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থানরত উজ্জ্বল মিয়া (৩৫) নামে এক ব্যক্তি দরজা খুলে দেন। পরে সেখান থেকে প্রায় দেড় লাখ ট্রামাডল বড়ি উদ্ধার করা হয়।
বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে গ্রেপ্তার আসামি এত দ্রুত কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে প্রশ্ন তৈরি হয়। মামলার কোনো দুর্বলতা ছিল কি না, সেটা নিয়ে কর্মকর্তারা নিজেরা পর্যালোচনা করেন।
ট্রামাডল একটি অপ্রচলিত মাদক। এটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের তফসিলে ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত। আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির কাছে এ ধরনের মাদক পাওয়া গেলে পরিমাণভেদে ১ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
তরিকুল ও উজ্জ্বলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ গত মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে আদালতে হাজির করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বেলা সাড়ে ৩টার দিকে রিমান্ডের শুনানি শুরু হয়। বিকেল ৪টার দিকে জামিনে বেরিয়ে যান আসামিরা।
গণমাধ্যমের সেই প্রতিবেদনের বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষ উপস্থাপন করলে মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিব ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৩৫ ধারায় নথি তলবের আদেশ দেন। নথি পর্যালোচনা শেষে আদালত গত বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) তাদের জামিন বাতিল করে আদেশ দেন।
কেআই/আরআইএস