ঢাকা, বুধবার, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৮ সফর ১৪৪৭

আইন ও আদালত

চানখাঁরপুলে ৬ হত্যা

‘পুলিশের পোশাক পরা লোকদের হিন্দিতে কথা বলতে শুনেছেন’ সাক্ষী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:০৬, আগস্ট ১৩, ২০২৫
‘পুলিশের পোশাক পরা লোকদের হিন্দিতে কথা বলতে শুনেছেন’ সাক্ষী সংগৃহীত ছবি

জুলাই অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে ‘পুলিশের পোশাক পরিহিত লোকদের হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শুনেছেন’ বলে দাবি করেছেন ওই মামলার একজন সাক্ষী।  

বুধবার (১৩ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্য দেওয়ার সময় পাঁচ নম্বর সাক্ষী শহীদ আহমেদ এ সাক্ষ্য দেন।

 

এদিন তিনজন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। এর মধ্যে চানখাঁরপুলে নিহত ইয়াকুবের বিষয়ে সাক্ষী দেন দুইজন। আর নিহত ইসলামুল হকের বিষয়ে সাক্ষী দেন একজন।    

ইয়াকুবের বিষয়ে ৫ নম্বর সাক্ষী শহীদ আহম্মেদ বলেন, আন্দোলনের ৫ আগস্টের ঘটনা। আমি, আমার ভাতিজা ইয়াকুব, আমার ছেলে সালমান, এলাকার রাসেল, সুমন, সোহেলসহ আরো অনেকে সকাল আনুমানিক ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে গণভবনের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। আমরা চানখাঁরপুল এলাকায় পৌঁছালে সেখানে হাজার হাজার লোক চারদিক থেকে জড়ো হচ্ছিল। তখন দেখলাম চানখাঁরপুল মোড়ের উল্টা পাশে অনেক পুলিশ, ছাপা পোশাকধারী পুলিশ ছিল। পুলিশের পোশাক পরিহিত লোকদের হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শুনি।  

পুলিশ তাদের বাধা দিচ্ছিল উল্লেখ করে শহীদ আহম্মেদ বলেন, পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি করে। আমরা যে যার মতো ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। আবার আমরা সামনে যাওয়ার চেষ্টা করি তখন পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করে। আমার পাশের একজনের পায়ে গুলি লাগে। তাকে আমি সরাচ্ছিলাম। তখন আমাকে একজন বলে আপনার ভাতিজা ইয়াকুবের গায়ে গুলি লেগেছে। আমি ওই ছেলেকে আরেকজনের কাছে রেখে আমার ভাতিজার কাছে যাই। আরো দুইজনসহ ভাতিজাকে অটোরিকশায় করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার বলেন যে, ইয়াকুব মারা গেছে। আমি আমার ছেলে সালমানকে ফোন করে ইয়াকুবের মাকে জানানোর জন্য বলি এবং তাকে হাসপাতালে আসতে বলি।

কারা গুলি করেছে সে বিষয়ে শহীদ আহম্মেদ বলেন, পরে জেনেছি শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে। ডিএমপির মো. ইমরুল, ইন্সপেক্টর আরশাদের উপস্থিতিতে কনস্টেবল সুজন, নাসিরুল, ইমাজ গুলি করেছিলেন। আরো অনেকেই ছিল।  

তার আগে ৪ নম্বর সাক্ষী ইয়াকুবের মা রহিমা আক্তার সাক্ষ্য দেন।  

তিনি বলেন, ইয়াকুব ছিলেন নিউমার্কেটের একটি প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারি ম্যান। সে গোপনে ছাত্র আন্দোলনে যেত। ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল নাজিমুদ্দিন রোডে আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। গুলি লাগার বিষয়ে শুনে আমি চিৎকার করে বাসা থেকে বের হয়ে গলিতে যাই। মহল্লার লোকজন আমাকে যেতে দেয়নি। আমাকে জানায় আমার ছেলে সুস্থ আছে। তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই সময় আমার ছেলের বয়স ছিল ৩৫ বছর। প্রতিবেশীরা কান্নাকাটি শুরু করলে আমার সন্দেহ হয় আমার ছেলের কিছু হয়েছে।

ওইদিন বেলা আনুমানিক ২টার দিকের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেখি আমার ছেলের লাশ খাটিয়ায় করে গলির ভেতর নিয়ে আসে। শহীদসহ (৫ নম্বর সাক্ষী) অনেকেই ছিল। ছেলের শরীর থেকে তখনও খাটিয়া বেয়ে অনেক রক্ত পড়ছিল। তারপর কাপড় সরিয়ে দেখি পেটে গুলি লেগে পছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে, রক্ত পড়া থামছে না।

‘আমি পরবর্তীতে টিভি নিউজ, ভিডিও এবং বিভিন্ন মাধ্যমে দেখেন যারা গুলি করেছে তারা ছাপা কাপড়ের পোশাক পরিহিত ছিল। পুলিশের গুলিতে তার ছেলে পড়ে যান। ’ 

যারা আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং নির্দেশ দিয়েছিল। তাদের সবার বিচার চান রহিমা আক্তার। পরে সাক্ষ্য দেন ইসলামুল হকের ভাই মো. মহিবুল হক।

এই মামলায় আটজন আসামি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল পলাতক।

আসামি শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক আরশাদ হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম গ্রেপ্তার আছেন ।

এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা গত ১১ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, চানখাঁরপুল এলাকায় আসামিরা নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর ‘প্রাণঘাতী’ অস্ত্র ব্যবহার করে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক এবং মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় ১৪ জুলাই অভিযোগ গঠন করা হয়। আর ১০ আগস্ট থেকে সাক্ষ্য শুরু হয়।

ইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আইন ও আদালত এর সর্বশেষ