ঢাকা, বুধবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ০৯ জুলাই ২০২৫, ১৩ মহররম ১৪৪৭

আইন ও আদালত

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপের বিধান বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৪৪, জুলাই ৮, ২০২৫
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপের বিধান বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হাইকোর্ট

ঢাকা: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করার বিধানসহ ২০১১ সালে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সন্নিবেশিত করা কয়েকটি বিধান অসাংবিধানিক বলে বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১৩৯ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।

দুটি রিটে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে যে রায়টি গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর দিয়েছিলেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ ।

 রায় ঘোষণার দিন রিটকারী ড.বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ আবেদনকারীর আইনজীবী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার বিধান বাতিল হলো, সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ এবং সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য সংক্রান্ত ৭ ক এবং ৭ খ বাতিল হলো; মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের বিধান নিয়ে হাইকোর্টের ক্ষমতা কমানো বিষয়ক ৪৪ (২) বাতিল করা হলো; এ ছাড়া ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান বাতিল করাকে বাতিল করা হয়েছে। ফলে সংবিধানের প্রস্তাবনা ও কিছু অনুচ্ছেদ সংশোধনে এ রায়ে গণভোটের বিধান ফিরে আসছে। কিন্তু সংসদের মাধ্যমে যে তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হলো, সেটার প্রতিবন্ধকতা পার হলেও বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে যে রায় (তত্ত্ববধায়ক অবৈধ) সেটার পুর্নবিবেচনা পরিবর্তিত হতে হবে ব্যবস্থাটা ফিরে আসার জন্য। সেটা আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায়।  

তবে বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার আগামী সংসদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন হাইকোর্ট। সংসদ আইন অনুসারে জনগণের মতামত নিয়ে বিধানগুলো সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করতে পারবে।

এর আগে ৪ ডিসেম্বর পৃথক রিটে জারি করা রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়।

২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

এ ছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়; সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়।

অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানও যুক্ত করা হয়। আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান থাকলেও ওই সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়।

এই সংশোধনী বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। গত ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।  

এ ছাড়া নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও রিট করেন।

পরে এই রুল সমর্থন করে সহায়তাকারী (ইন্টারভেনার) হিসেবে যুক্ত হন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণফোরাম, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা। তাদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

আদালতে বদিউল আলমসহ পাঁচজনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো.আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদ উদ্দিন।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার, জয়নুল আবেদীন, মো.বদরুদ্দোজা ও রুহুল কুদ্দুস কাজল।

এ ছাড়া অন্যান্য রুল সমর্থন করে সহায়তাকারীদের পক্ষে আরও ছিলেন (ইন্টারভেনার) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, আইনজীবী ইশরাত হাসান, এহসান আব্দুল্লাহ সিদ্দিক, মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী, এবিএম হামিদুল মিসবাহ (ইন পারসন), আইনজীবী মোস্তফা আসগর শরীফি (ইন পারসন), সোনিয়া জামান খান ও আবদুল মোমেন চৌধুরী।

ইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।