আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের রিমান্ড শুনানির পরে দায়িত্বরত সাংবাদিকদের প্রতি আক্রমণাত্মক ব্যবহার করেছেন কয়েকজন আইনজীবী। তারা সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকেলে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এদিন দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে মমতাজকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। তিনটার দিকে তাকে তোলা হয় সিএমএম আদালতের সপ্তম তলায় মো. জুয়েল রানার আদালতে।
এ সময় আদালতে অন্য মামলার শুনানি চলছিল। তবে মমতাজকে আদালতে নেওয়া হলে পুরো এজলাস কক্ষ আইনজীবী, পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এ সময় কিছুটা হট্টগোল তৈরি হয়। মমতাজকে এজলাসকক্ষে নেওয়া হলে সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহের জন্য সেখানে যান। তারা এজলাস কক্ষে প্রবেশ করেন।
এ সময় দুই আইনজীবী মাহবুব আলম ও আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এজলাস কক্ষ থেকে বের করে দিতে বলেন। এ নিয়ে কিছু কথা কাটাকাটি হয় দুই পক্ষের। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। শুনানি শেষে বিচারক মমতাজ বেগমের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডের আদেশ হওয়ার পর মমতাজ বেগমকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়। এরপর মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটরের সঙ্গে থাকা আইনজীবীরা তার আগেই এসে ব্রিফিং করতে সিএমএম আদালতের সামনে রাখা ডায়াসের সামনে দাঁড়ান। তখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো নিয়ে নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিও করেন।
এ সময় বেসরকারি টেলিভিশন ‘এখন’-এর প্রতিবেদক রাব্বি হোসেন, সময় টেলিভিশনের প্রতিবেদক আসিফ মাহমুদ সিয়াম আইনজীবীদের ধাক্কাধাক্কি না করে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়াতে বলেন। এরপরই সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন দুই আইনজীবী মাহবুব আলম ও আক্তার হোসেন।
উপস্থিত কয়েকজন আইনজীবী ও সাংবাদিক তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। কে কোথায় কাজ করেন, তা দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। তারা সাংবাদিকদের গালিগালাজ করেন। কয়েকজন সাংবাদিকদের হেনস্থা করেন এবং গালিগালাজ করেন।
বিএনপিপন্থি কয়েকজন আইনজীবী এ সময় তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। অপরদিকে কয়েকজন আইনজীবী তাদের পক্ষ নিয়ে তর্কে জড়ান। এ অবস্থায় ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী অভিযুক্ত দুই আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক রাব্বি হোসেন বলেন, এজলাসে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত হলে আইনজীবীরা আমাদের বলেন, এখানে সাংবাদিকদের কী কাজ? আমি বলেছি, নিউজের জন্যই এসেছি। পরে শুনানি শেষ হলে আমরা সুশৃঙ্খলভাবে তাদের ডায়াসের সামনে দাঁড়াতে বলি। এরপরই আমিসহ একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদকের ওপর ক্ষিপ্ত হন আইনজীবীরা। একপর্যায়ে আমাদের ধাক্কা দিতে থাকেন। এ সময় তারা বলেন, ১৭ বছর কই ছিলাম, বিএনপিপন্থি আইনজীবী পরিচয় দিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন।
আরেক সাংবাদিক সিয়াম বলেন, আইনজীবী মাহবুব আলী ও আক্তার হোসেন বারবার সাংবাদিকদের বলছিলেন, আদালত আমার, এখানে আমরা যা বলব তাই হবে। এতে সাংবাদিকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা বাড়ে। পরে তিনি আমাকে দালাল সাংবাদিক ও ধান্ধাবাজ বলে গালি দেন। তিনিসহ আরও কয়েকজন আইনজীবী গায়ে হাত তোলার জন্য তেড়ে আসেন।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার চেষ্টা ও হুমকির ঘটনায় ঢাকার অধস্তন আদালতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির (সিআরইউ) পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সংগঠনের সভাপতি লিটন মাহমুদ এবং সাধারণ সম্পাদক মামুন খান এক বিবৃতিতে ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
কেআই/এমজেএফ