ডাচ চিত্রকর ভিনসেন্ট ভ্যানগগের বিখ্যাত আইরিস ফুল পাপড়ি মেলেছে ঢাকার বুকে। প্রকৃতিপ্রেমী এই ইম্প্রেশনিস্ট শিল্পীর আইরিস ফুল নিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি বিখ্যাত চিত্র।
সে কথায় পরে আসছি। আগে জেনে নেই ফুলটির পরিচয়। মনোমুগ্ধকর এ আইরিস ফুলের জন্মস্থান জাপান। জাপানের মানুষের কাছে ফুলটি খুবই প্রিয়। হঠাৎ দেখলে মনে হয় টিউলিপ ফুলের জাত ভাই আইরিস। টিউলিপের সঙ্গে এর মিল আছে বটে, কিন্তু সেটা খুবই সামান্য। তাই টিউলিপের দোহাই দিয়ে নয়, বরং নিজের সৌন্দর্যেই মানুষের মন জয় করার ক্ষমতা রয়েছে আইরিসের।
সম্প্রতি এই আইরিস ফুল পাপড়ি মেলেছে রাজধানীর নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু চিকিৎসক ও সার্জন ডা. আবদুল হানিফ টাবলুর বাসায়। আগে কখনো ঢাকায় এ ফুলটি ফুটেছে বলে আমার জানা নেই।

এক বছর আগে ডা. টাবলু গিয়েছিলেন জাপানে প্রশিক্ষণ নিতে। সে সময় সেখানকার ওসাকা শিশু হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের পরিচালক আকিও কুবোতা তাকে একটি আইরিস ফুলের চারা উপহার দেন। দেশে ফিরে সে চারাটি যত্ন নিয়ে লালন-পালন করেন ডা. টাবলু। আর তার পরিশ্রমের ফল হিসেবে ছাদের বাগানে স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে ফুটেছে বেগুনি আইরিস।
আইরিস ফুলের গাছ অনেকটা রজনীগন্ধার মতো। কুন্দ থেকে হয় নতুন চারা। পাতাগুলো হয় লম্বা। প্রায় সব ঋতুতেই এ ফুল ফোটে। নীল, বেগুনি, হালকা গোলাপি ও কমলা এবং সাদা ও হলুদ রঙের হয় এ ফুল। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বেগুনি আইরিস। কালেভদ্রে কালো রঙের আইরিস ফুলও দেখা যায়।
বিশ্বের নানা স্থানে প্রায় ২০০ ধরনের আইরিস ফুল রয়েছে। তাদের কোনো কোনোটি মরুভূমিতে হয়, কোনটি শীতপ্রধান অঞ্চলে, কোনটি বা উষ্ণ এলাকায়। একেক জাতের ফুল একেক রকম হয়। ডা. টাবলুর ছাদে যেটি ফুটেছে সেটির সঙ্গে টিউলিপ ফুলের কিছুটা মিল রয়েছে।
এ ফুল শুধু সৌন্দর্যের দিক দিয়েই মনোমুগ্ধকর নয়, তার রয়েছে অসাধারণ সব গুণাগুণও। এর শিকড় ব্যবহৃত হয় ত্বকের সমস্যার চিকিৎসায়। ত্বকের দাগ দূর করতে কসমেটিকসও তৈরি হয় ফুলটির রস থেকে।
আইরিস একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ রংধনু। আইরিস একজন গ্রিক দেবীর নামও বটে। গ্রিকদের বিশ্বাস অনুযায়ী দেবী আইরিস রংধনু ব্যবহার করে চলতে পছন্দ করতেন। তিনি ছিলেন ভালোবাসার বার্তাবাহক। তাই আইরিস ফুলকেও বার্তা প্রেরণের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। মজার বিষয় হলো, বিভিন্ন ধরনের আইরিসের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম বার্তা পাঠানো হয়। প্রিয়জনকে এই ফুল উপহার দেওয়ার মাধ্যমে মানুষ মনের নানা অনুভূতি প্রকাশ করে। যেমন- নীল আইরিস আস্থা-বিশ্বাস এবং আশার প্রতীক। আবার সাদা আইরিস পবিত্রতার পরিচয় বহন করে।
আইরিস ছিল ডাচ শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গগের প্রিয় ফুল। অল্প বয়সে মা-বাবাকে হারালে তাকে ফ্রান্সের প্রতিবন্ধীদের আশ্রয়খানা পল-দ্য-মাসলে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসার পাশাপাশি চলে তার পরিচর্যা। সেই আশ্রয়কেন্দ্রে ছিল বিশাল সুদৃশ্য ফুল বাগান। নানা ধরনের ফুলের গাছ ছিল সে বাগানে। তার মধ্যে ছিল আইরিস

বাংলাদেশের অনেক মানুষের কাছে অপরিচিত হলেও আইরিস বিশ্বের খুব পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি ফুল। আর ঢাকায় ফুলটি ফোটার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে বাংলাদেশেও এ ফুল চাষে সফলতা অর্জন করার সম্ভাবনা রয়েছে।
আইরিস যেমন সুন্দর একটি ফুল, তেমনি সব সুন্দর বার্তা বহন করে। একবার ফুলটা দেখলে যে কারও ভালো লাগতে বাধ্য। বাণিজ্যিকভাবেও এর চাহিদা অনেক। তাই বাংলাদেশে এই ফুলের ফোটার ঘটনাটি আমাদের জন্য সুসংবাদই বটে!
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক ইচ্ছেঘুড়ি-ichchheghuri@banglanews24.com