ঢাকা, রবিবার, ২৯ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

যে সাহাবীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল দাজ্জালের

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৫
যে সাহাবীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল দাজ্জালের

কেয়ামতের আগে পৃথিবীতে আবির্ভূত হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ফিতনাকারী—মাসীহ দাজ্জাল। হাদিসে বলা হয়েছে, তার অবস্থান পৃথিবীতে থাকবে মাত্র ৪০ দিন।

কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই সে মানবজাতিকে চরম ফিতনার মুখোমুখি করবে।

আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জালের আবির্ভাব, তার অবস্থান, ফিতনা ও পরিচয় সম্পর্কে উম্মতকে সতর্ক করে গেছেন। এমনকি হাদিসে উল্লেখ আছে, এক সাহাবী দাজ্জালের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেছিলেন।

দাজ্জাল—মানবজাতির সবচেয়ে বড় ফিতনা
হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে কেয়ামত পর্যন্ত মানবজাতির জন্য দাজ্জালের চেয়ে বড় ফিতনা আর কিছু নেই। সে এমন অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শন করবে, যা দেখে বহু মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে। সে নিজেকে প্রভু ও আল্লাহ হিসেবে দাবি করবে এবং তার দাবিকে বিশ্বাসযোগ্য করতে বিভিন্ন ‘প্রমাণ’ উপস্থাপন করবে।

রাসূল (সা.) হাদিসে দাজ্জালের এই মিথ্যাচার এবং চমকপ্রদ ক্ষমতা সম্পর্কে আগেভাগেই সতর্ক করে দিয়েছেন। হাদিস অনুযায়ী, দাজ্জালের অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদি ও নারী।

ইস্পাহানের ৭০ হাজার ইহুদি দাজ্জালের অনুসারী হবে
হাদিসে বর্ণিত আছে, ইরানের ইস্পাহান অঞ্চল থেকে ৭০ হাজার ইহুদি দাজ্জালের অনুসারী হবে, যাদের সবাই সেলাইবিহীন চাদর পরিহিত থাকবে।

দাজ্জালের আকৃতি সম্পর্কেও হাদিসে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। এ বিষয়ে সাহাবী তামিম আদ-দারী (রা.)-এর একটি ঘটনা বিশিষ্টভাবে আলোচিত।

তামিম আদ-দারীর অভিজ্ঞতা: দাজ্জালের সন্ধান
ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন এশার নামাজ শেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের একত্রিত করে বললেন, তোমরা কি জানো আমি কেন তোমাদেরকে একত্রিত করেছি?

সাহাবীগণ উত্তরে বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন।

রাসূল (সা.) বললেন, আমি তোমাদের একটি সংবাদ দেওয়ার জন্য ডেকেছি। তামিম আদ-দারী ছিলেন একজন খ্রিস্টান, তিনি আমার কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তিনি মিথ্যুক দাজ্জাল সম্পর্কে এমন একটি ঘটনা বলেছেন, যা আমি তোমাদের সামনে উপস্থাপন করতে চাই।

রাসূল (সা.) তামিম আদ-দারীর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন: একবার তিনি লাখাম ও জুজাম গোত্রের ৩০ জন লোক নিয়ে জাহাজে সমুদ্রযাত্রা করেন। দীর্ঘ এক মাস সাগরে দিকভ্রান্ত থাকার পর তারা এক অচেনা দ্বীপে পৌঁছান। সেখানে তারা দেখতে পান একটি অদ্ভুত প্রাণী—পুরো শরীর মোটা পশমে ঢাকা, সামনের-পেছনের দিক আলাদা করে চেনা যায় না।

প্রাণীটি নিজেকে পরিচয় দেয় ‘জাসসাসা’ বা সংবাদ সংগ্রহকারী হিসেবে এবং তাদের একটি গুহার দিকে নিয়ে যায়। সাহস করে গুহায় প্রবেশ করলে তারা দেখতে পান এক দৈত্যাকৃতির মানুষ, যার হাত-পা লোহার শিকলে বাঁধা।

দাজ্জালের জবানিতে ভবিষ্যদ্বাণী
লোকটি (দাজ্জাল) তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করে। সে জানতে চায়:

বাইসানের খেজুর বাগানে এখনো ফল ধরে কি না,

তাবারিয়া সাগরে এখনো পানি আছে কি না,

জোগাড়ের ঝর্ণায় পানি আছে কি না এবং মানুষ তা দিয়ে চাষ করে কি না,

উম্মীদের নবী (সা.) কী করছেন।

তারা প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর দিলে সে জানায়, আমি মাসীহ দাজ্জাল। শিগগিরই আমি এখান থেকে মুক্তি পাব এবং ৪০ দিনে পুরো পৃথিবী ঘুরে বেড়াব। এমন কোনো জনপদ থাকবে না, যেখানে আমি প্রবেশ করব না—শুধু মক্কা ও তাইবা (মদিনা) ছাড়া।

মদিনা ও মক্কার নিরাপত্তা
দাজ্জালের কথা বর্ণনার পর রাসূল (সা.) তাঁর লাঠি দিয়ে মিম্বরে তিনবার আঘাত করে বলেন, এই হচ্ছে তাইবা, অর্থাৎ মদিনা। তিনি বলেন, তামিম আদ-দারীর বর্ণনাটি আমার দাজ্জাল সংক্রান্ত বর্ণনার সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে।

সাহাবীরা জানতে চান, ইয়া রাসূলাল্লাহ, সেই দ্বীপটি কোথায়?

রাসূল (সা.) বলেন, জেনে রাখো, সেই দ্বীপটি সিরিয়া সাগর অথবা ইয়েমেন সাগরের কাছাকাছি, যা পৃথিবীর পূর্বদিকে অবস্থিত। তিনি তিনবার পূর্বদিকে ইঙ্গিতও করেন।

শেষ কথা
দাজ্জাল মানবজাতির জন্য এক ভয়ংকর ফিতনা। রাসূল (সা.) আমাদের পূর্বপ্রস্তুতির জন্য তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। আমাদের উচিত, তার ফিতনা থেকে রক্ষা পেতে ইমান দৃঢ় করা, হাদিস অধ্যয়ন করা এবং কোরআনের আলোকে জীবন পরিচালনা করা।

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৫
এমজে

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।