ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে ফিরে: ‘আগের মেয়র হাবিবুর রহমান দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে ডুবেছিলেন। গত ১৭ বছর মেয়র পদে থেকেও পৌরসভায় কাঙ্খিত উন্নয়ন করতে পারেননি তিনি।
‘দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন পৌরসভা গড়তেই পৌরবাসী আমাকে ভোট দিয়েছেন। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই। শেষ বয়সে মেয়র হয়েছি। এখন নাগরিক সমস্যার সমাধানেই আমার মনোযোগ থাকবে। ’
বাংলানিউজের সঙ্গে একান্তে আলাপকালে নিজের এ পরিকল্পনার কথা জানান, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুস সাত্তার।
গত ০২ জানুয়ারি রাতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কার্যালয়ে বসে তার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের এ কমান্ডার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কোনো পদ-পদবীতে নেই। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমন বলয়ের নেতাকর্মীরাই তাকে নির্বাচনী বৈতরণী পাড় করিয়ে দিয়েছেন বলে মনে করেন অনেকে।

Ishworganj_Mayor
আর এ কারণেই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীকে হারিয়ে মেয়র হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন তিনি।
এবারের নির্বাচনে তিনি পান মোট ৭ হাজার ২১১ ভোট। তার প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব পান ৬ হাজার ৬৩৬ ভোট ও বিএনপির ফিরোজ আহমেদ বুলু পান মাত্র ১ হাজার ৪৮২ ভোট।
ভোটের রাজনীতিতে নতুন নন আব্দুস সাত্তার। ১৯৯২ সালে ঈশ্বরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে হেরে যান তিনি। এরপর টানা তিনবার ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দাঁড়িয়ে হ্যাট্রিক পরাজয় বরণ করেন। কিন্তু তাতেও দমে যাননি এ মুক্তিযোদ্ধা।
প্রবীণ এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘স্থানীয় ভোটারদের প্রতি আমার আত্মবিশ্বাস ছিল। ভোটের হারে কখনোই আমি হতাশ ছিলাম না। বার বার ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি। এ কারণেই শেষ বয়সে মেয়র হতে পেরেছি। ’

undefined
চতুর্থবার মেয়র নির্বাচন করার পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, এক মাস আগেও জানতাম না আমি নির্বাচন করবো। ১৩ ডিসেম্বরের পর থেকে পৌর নাগরিক পরিষদের ব্যানারে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করি। এবার ঠিকই ভোটাররা পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। ’
আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় পৌরবাসীর বিপদে-আপদে পাশে থাকতাম। তাদের সঙ্গে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। তারা আমার প্রতি আস্থা রেখেই নির্বাচিত করেছেন। নাগরিকদের দেওয়া আশ্বাস বাস্তবায়নে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। ’
দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের অভিজ্ঞতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের চেয়ে স্থানীয় ভোটাররা প্রার্থীর ইমেজকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। ইমেজ সঙ্কটের কারণেই নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থী এখানে জিততে পারেননি। ’
‘ক’ শ্রেণির মর্যাদাধারী ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দারা নানা সমস্যায় নাকাল। বেহাল রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নামমাত্র। এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নতুন এ মেয়র এসব সমস্যা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের চেষ্টার কথা জানান।
এছাড়া বিদ্যুৎ সমস্যা ও জলাবদ্ধতার সমাধানে পৌরবাসীর মতামত অনুযায়ী করার কথা জানান।
যেসব এলাকায় কম ভোট পেয়েছেন, সেসব এলাকায় উন্নয়নের কৌশলের বিষয়ে নতুন মেয়র আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘ভোট কম-বেশি পাওয়ার সঙ্গে উন্নয়নকাজের কোনো রকমফের করতে চাই না। সব ওয়ার্ডেই সমান নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ’

undefined
সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডই হবে মডেল ওয়ার্ড, এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অবহেলিত এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করেই প্রথমে কাজ শুরু করতে চাই। কারো বেলাতেই আমি স্বজনপ্রীতি করতে চাই না। ’
স্থানীয় সংসদ সদস্যের চেয়ে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধির দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতাও বেশি বলে মনে করেন এ মেয়র।
এ বিষয়ে তার মত, ‘স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের সব সময় পাবলিকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হয়। এ কারণে নাগরিক সমস্যা-সমাধানে তাদের কাজ করাটাও সহজ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
এমএএএমকে/এসআর