আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকায় ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। রোববার রাতের এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮০০ জন ছাড়িয়েছে।
স্থানীয় সময় রোববার রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে নানগারহার ও কুনার প্রদেশ কেঁপে ওঠে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল মাত্র ৮ কিলোমিটার গভীরে। এ ধরনের ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি হয় বেশি, কারণ ভূকম্পন তরঙ্গ শক্তি হারানো ছাড়াই সরাসরি পৃষ্ঠে আঘাত হানে।
প্রথম ধাক্কার ২০ মিনিট পর নানগারহারের বাসাউল এলাকায় ৪ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়। এর পর থেকে ৪ দশমিক ৩ থেকে ৫ দশমিক ২ মাত্রার বেশ কয়েকটি কম্পন অনুভূত হয়েছে জালালাবাদ ও আশপাশে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল জালালাবাদ শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে, কুনার প্রদেশের কাছে। প্রায় তিন লাখ মানুষের শহর জালালাবাদ পাকিস্তান সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র। এখানে বেশিরভাগ ভবনই ইট–কংক্রিটের, তবে শহরের বাইরে এখনো মাটি ও কাঠের বাড়িঘর বেশি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফাত জামান জানান, উদ্ধারকাজ অব্যাহত আছে এবং বহু গ্রাম পুরোপুরি ধসে গেছে। টোলো নিউজ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৩৩৫ জন আহতকে হেলিকপ্টারে করে নানগারহার আঞ্চলিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাখতারের খবরে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৩০ জন চিকিৎসক ও ৮০০ কেজি ওষুধ পাঠিয়েছে কুনারে।
সড়ক যোগাযোগ আংশিকভাবে চালু হলেও কুনারের বহু অভ্যন্তরীণ রাস্তা এখনো বন্ধ। জনবসতি এলাকায় ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে আহতদের উদ্ধারে জরুরি সেবা সংস্থাগুলো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আফগান জনগণের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। ইরানও ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ জাকারিয়া শনিজাই বলেন, পাহাড়ি ভূপ্রকৃতি ও আকস্মিক বন্যার কারণে উদ্ধারকাজ কঠিন হয়ে পড়েছে। সড়ক ভেঙে গেছে, সেতু ধসে পড়েছে, অনেক এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে খাদ্য, পানি ও ওষুধ পৌঁছানোও বিলম্বিত হচ্ছে।
আফগানিস্তান ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এজন্য দেশটি মাঝারি থেকে শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রায়ই কেঁপে ওঠে।
২০২৩ সালে হেরাত প্রদেশে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে দুই হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। ২০২২ সালে পাকতিকা, পাকতিয়া, খোস্ত ও নানগারহারে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণ হারান অন্তত এক হাজার মানুষ।
ভূতাত্ত্বিক শনিজাইয়ের মতে, চামান, হেরাত, কুনার, পাঞ্জশির, সারোবি ও স্পিন ঘারসহ একাধিক ফল্টলাইন আফগানিস্তান অতিক্রম করেছে। এ কারণে এখানে বারবার ভূমিকম্প হয়।
আরএইচ