ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১২ সফর ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র বাণিজ্যে বিরোধিতা বাড়ছে: জরিপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৫৬, আগস্ট ৭, ২০২৫
ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র বাণিজ্যে বিরোধিতা বাড়ছে: জরিপ

ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার প্রেক্ষাপটে ব্রাজিল, কলম্বিয়া, গ্রিস, দক্ষিণ আফ্রিকা ও স্পেনের বেশিরভাগ মানুষ মনে করছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধ অথবা কমিয়ে আনা উচিত। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) প্রকাশ হওয়া এক জরিপে উঠে আসা এ তথ্য মিলিছে কাতারের সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে।

 

জরিপে অংশ নেওয়া পাঁচ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি  স্পেনের উত্তরদাতা (৫৮ শতাংশ) অস্ত্র বিক্রি পুরোপুরি বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন। এরপর রয়েছে গ্রিস (৫৭ শতাংশ), কলম্বিয়া (৫২ শতাংশ)। ব্রাজিলের ৩৭ শতাংশ উত্তরদাতা অস্ত্র বিক্রি পুরোপুরি বন্ধের পক্ষে মত দিলেও ২২ শতাংশ এর পরিমাণ কমানোর পক্ষে। দক্ষিণ আফ্রিকায় এ হার যথাক্রমে ৪৬ ও ২০ শতাংশ।

এই জরিপটি পরিচালনা করেছে গ্লোবাল এনার্জি এমবার্গো ফর প্যালেস্টাইন নেটওয়ার্ক, যা বামপন্থী আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রোগ্রেসিভ ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা অনুমোদিত। প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে পোলফিশ। গত জুলাইয়ে জরিপটি পরিচালিত হয়।  

এটি এমন সময় প্রকাশিত হলো,  যখন জাতিসংঘের অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদনকারী ফ্রানচেস্কা আলবানিজ দেশগুলোকে ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইসরায়েল একটি ‘গণহত্যার অর্থনীতি’ গড়ে তুলেছে।

গ্লোবাল এনার্জি এমবার্গো ফর প্যালেস্টাইন নেটওয়ার্কের প্রচারক আনা সানচেজ বলেন, মানুষ তাদের মতামত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে। তারা দখলদারিত্ব, বর্ণবাদ ও গণহত্যায় জ্বালানি জোগান দিতে আর রাজি নয়। কোনো দেশ গণতন্ত্রের দাবিদার হতে পারে না, যদি তারা ইসরায়েলের সঙ্গে শক্তি, সামরিক বা অর্থনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে যায়।

সংগঠনটি জানিয়েছে, যেসব দেশ জরিপে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেগুলোর জ্বালানি আমদানি ও পরিবহনে সরাসরি ভূমিকা রয়েছে ইসরায়েলের সঙ্গে। জরিপে প্রতি দেশের এক হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেন, যাদেরকে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়।

গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে যখন মানবিক সংকট তীব্র হচ্ছে, তখন এই জরিপে উঠে এসেছে ওই দেশগুলোর জনগণের অবস্থান। গ্রিস ও স্পেনে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরোধিতা সবচেয়ে বেশি– যথাক্রমে ৬১ ও ৬০ শতাংশ। কলম্বিয়ায় ৫০ শতাংশ, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় বিরোধিতার হার যথাক্রমে ৩০ ও ত্রিশ শতাংশ। অন্যদিকে, ইসরায়েলের অভিযানের পক্ষে রয়েছে ব্রাজিলে ৩৩ এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০ শতাংশ মানুষ।

বর্তমানে, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় প্রাণ হারিয়েছে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। অঞ্চলটি এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ শিশু-অঙ্গহানি ঘটনার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। প্রায় সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত গাজা ক্রমেই ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে অস্ত্র কোম্পানি ও দালালদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে।

গত জুনে, ড্যানিশ শিপিং জায়ান্ট মার্স্ক ইসরায়েলি দখলদার বসতিগুলোর সঙ্গে জড়িত কোম্পানিগুলো থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে। এর আগে, সংস্থাটির বিরুদ্ধে ইসরায়েলি দখলদারিত্বে সহায়তার অভিযোগ ওঠে।

এছাড়া, মঙ্গলবার নরওয়ে সরকার জানায়, তারা ইসরায়েলি একটি ফার্মে বিনিয়োগ খতিয়ে দেখবে। ওই ফার্মটি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর জন্য ফাইটার জেটের যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি স্যাভরিন ওয়েলথ ও পেনশন ফান্ড ইসরায়েলের যুদ্ধ ও দখলদারিত্বে যুক্ত কোম্পানি থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছে।

জরিপ অনুযায়ী, স্পেনের ৪১ শতাংশ মানুষ জোরালোভাবে সমর্থন জানিয়েছেন। তারা চান, তাদের দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অস্ত্র, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্য বাণিজ্যে কড়াকড়ি আরোপ করুক। এই হার কলম্বিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩৩ শতাংশ, গ্রিসে ২৮ শতাংশ এবং ব্রাজিলে ২৪ শতাংশ।

প্রোগ্রেসিভ ইন্টারন্যাশনালের সহ-সমন্বয়ক ডেভিড অ্যাডলার বলেন, বিশ্ববাসীর বার্তা স্পষ্ট— গাজায় হামলা থামাতে তারা শুধু নিন্দা নয়, কার্যকর পদক্ষেপ চায়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষ তাদের সরকারকে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ ও ইসরায়েলের দখলদারিত্ব রোধে আহ্বান জানাচ্ছে।

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।