ইরানে মার্কিন সামরিক মোড়লগিরির পর বাঙ্কার বিধ্বংসী বোমার শক্তি অর্জনে উঠেপড়ে লেগেছে শক্তিশালী দেশগুলো। ভারত আর ইসরায়েলও এমন অস্ত্র তৈরির কাজ করছে।
কিন্তু সবার আগে বাজিমাত করে দিল তুরস্ক। দেশটি বাঙ্কার বিধ্বংসী বোমা সফল পরীক্ষা তো চালিয়েছেই। পাশাপাশি এমন এক বোমাও দেশটির হাতে এসেছে, যার ধ্বংস ক্ষমতা পৃথিবীর বুকে নরক নামাতে পারে।
দুটি অত্যাধুনিক বিমান বোমা তৈরি করেছে তুরস্ক। দেশটি ১৭তম আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা শিল্প মেলায় গাযাপ আর হায়ালেত নামের বোমাদুটি দেখিয়েছে। সামরিক শক্তিতে দিনে দিনে দানবীয় হয়ে ওঠার প্রমাণ এভাবেই দিচ্ছে এককালে ‘ইউরোপের রুগ্ন মানুষ’ বলে তাচ্ছিল্য পাওয়া তুরস্ক। দেশটির জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র বোমাগুলো তৈরি করেছে।
হায়ালেত নামের পেনিট্রেটর বোমাটি তুর্কি এফ-১৬ বিমান দিয়ে ব্যবহার করা যাবে। শক্তি পরীক্ষার জন্য বিমান থেকে একটি দ্বীপে বোমাটি ফেলা হয়েছিল। পাথর-মাটি ভেদ করে বোমাটি ৯০ মিটার গভীরে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটায়। ১৬০ মিটার চওড়া দ্বীপটির পুরো প্রস্থজুড়ে, এমনকি সবচেয়ে দূরের স্থানেও বিস্ফোরণের ধাক্কা পৌঁছে গিয়েছিল।
বোমাটির বাঙ্কার বিধ্বংসী ক্ষমতাও অনেক বেশি। রিইনফোর্সড কংক্রিটের বিরুদ্ধে আমাদের চেনাজানা বোমাগুলোর পেনিট্রেশন পাওয়ার আড়াই মিটারের মধ্যে। কিন্তু তুরস্কের নতুন এই বোমাটি সি-৫০-এর মতো শক্তিশালী কংক্রিটের ভেতর ৭ মিটার পর্যন্ত ভেদ করতে পারে।
২৫ মিলিমিটারের ইস্পাত কাঠামোর ওপরেও বোমাটি পরীক্ষা করা হয়। এরকম একাধিক স্টিলের খাঁচা এবং ১০ মিটার বালির স্তর পার হয়ে দেড় টন ওজনের কংক্রিটের দেয়াল ভেদ করতে সফল হয়।
এভাবে বোমাটি ৬০০ মিটার গভীরে পৌঁছেছিল। ভুতের মতো শত্রুপক্ষের গোপনতম স্থানে পৌঁছে যাবে এর শক্তিশালী বিস্ফোরণ। তাই এর নামটিও ভুত। হ্যাঁ দর্শক, ‘হায়ালেত’ অর্থ ভুত।
তুরস্কের সবচেয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী কনভেনশনাল অ-পারমাণবিক বিমান বোমা বলা হচ্ছে ৯৭০ কেজি ওজনের গাজাপকে। এতে আছে খণ্ড খণ্ড বিস্ফোরণ বিশাল জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো উন্নত প্রযুক্তি। আর হায়ালেত বোমাটি এনইবি-১ এবং এনইবি-২ নামেও পরিচিত।
এটি পরবর্তী প্রজন্মের পেনিট্রেশন বোমা। কংক্রিট এবং ইস্পাতের দেয়ালের মতো শক্ত কাঠামো ভেদ করার জন্য বোমাটি ডিজাইন করা হয়েছে।
‘গাজাপ’ অর্থ ক্রোধ। ওই এমকে-৮৪ বিমান বোমাটির কাঠামোতে ১০ হাজারটি খণ্ড আছে। বিস্ফোরণের পর টুকরো টুকরো হয়ে এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে বোমাটির ধ্বংসলীলা। প্রতি বর্গমিটারে এলাকায় বোমাটির যে ধ্বংস ক্ষমতা, তাতে করে অস্ত্রটিকে স্ট্যান্ডার্ড এমকে-সিরিজ বোমার তুলনায় তিনগুণ বেশি শক্তিশালী বলা যায়। বোমাটি তুরস্কের এফ-১৬ এবং এফ-৪ যুদ্ধবিমান থেকে ব্যবহার করা হতে পারে। দেশটি ভবিষ্যতে ড্রোন দিয়ে বোমাটি ব্যবহার করার কথা ভাবছে।
বোমাটিতে একটি মডিফাই করা ফিলার আছে। ভেতরে আরও আছে পাঁজরের মতো কাঠামো। এতে বিস্ফোরণের প্রভাব বহুগুণ বেড়ে যায়। বোমাটির নকশার সঙ্গে প্রতিরক্ষা গ্রেনেডের মিল আছে। ফলে বিস্ফোরণের ধাক্কায় বোমাটি থেকে এলোমেলো আকারের স্প্লিন্টার ছুটে গিয়ে আঘাত হানে না। বরং স্প্লিন্টারগুলো নির্দিষ্ট আকারের হয়ে থাকে বলে জানা গেছে।
এমএইচডি/আরএইচ